ছাত্রলীগের ২ নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, তিন দাবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাঁশ ফেলে অবরোধ করেন নেতা–কর্মীরা। বুধবার বিকেলে সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পূর্বশক্রতার জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সালমান চৌধুরী ওরফে হৃদয় এবং ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহকে মারধরের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন নেতা-কর্মীরা।

বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের কাছে তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো মারধরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও শাস্তি নিশ্চিত করা; ছাত্রলীগের দুই নেতার সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে ছাত্রলীগ নেতা সালমান চৌধুরী ও এনায়েত উল্লাহকে মারধর করেন বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সালমানপুর এলাকার বাসিন্দা রনি মজুমদার। এ সময় রনির সঙ্গে ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সালমান ও এনায়েতকে কাঠের গুঁড়ি দিয়ে পেটান। ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। একই সঙ্গে হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। কিন্তু কোনো সমঝোতা না হওয়ায় তিন কিলোমিটার দূরে সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী এলাকায় গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। নেতা-কর্মীরা মহাসড়কে বাঁশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সভাপতি রাফিউল আলম ওরফে দীপ্ত বলেন, ‘কিছু অছাত্র ও বহিরাগত মিলে এনায়েত ও সালমানকে মারধর করে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে আমরা আন্দোলন করি। আমরা দুই ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাই। প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চাই।’

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী বলেন, ছাত্রদলের নেতা রনির সঙ্গে এনায়েতের আগের বিরোধ ছিল। এটা নিয়ে ঝামেলা হয়। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতারা এনায়েত ও সালমানকে বাঁচাতে যান। তাঁরা মারধরে ছিলেন না। তাঁরা সেখানে চা খাচ্ছিলেন। তাঁরা যে বাঁচাতে গেছেন, তার ফুটেজ আছে।

প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতা–কর্মীদের সরিয়ে দেন। এ সময় পুলিশের কাছে তিন দফা দাবি জানান ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা
ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, যাঁরা ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর হামলা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য দাবিগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।

ছাত্রলীগ নেতা সালমান চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে ও এনায়েত ভাইকে কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে ডাকা হয়। আমরা হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় গেট দিয়ে কোটবাড়ী যাচ্ছিলাম। তখন সালমানপুর এলাকায় ছাত্রদলের নেতা রনির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও অন্য পক্ষের ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব দাস, কাউছার আহমেদ, ইকবাল খান ও ফয়সাল আমাদের ওপর কাঠের গুঁড়ি দিয়ে হামলা করেন। বিপ্লব আমাকে কাঠের গুঁড়ি দিয়ে মারেন। এনায়েত ভাইকেও মারেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ছাত্রলীগ সড়ক অবরোধ করে। আমরা এর বিচার চাই।’

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘রনির সঙ্গে এনায়েতের পূর্ববিরোধ আছে। ওই থেকে ঝামেলা হয়। এর বেশি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’ অভিযুক্ত রনি ও ছাত্রলীগ নেতা এনায়েতের মুঠোফোনে বিকেলে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এনায়েত ও সালমানকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ সুযোগে পূর্ববিরোধের জেরে রনি ওই দুই নেতার ওপর হামলা করেন। তাঁরা রনিকে খুঁজছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।