খোয়াইয়ের পাড় ফের দখলে

এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন নদের দুই পাড়ের পাঁচ শতাধিক স্থাপনাও উচ্ছেদ করে। কিন্তু প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না।

হবিগঞ্জ শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরোনো খোয়াই নদ। কয়েক বছরে নদীর দুই পাড় দখলে এখন তা খালে পরিণত হয়েছে। গতকাল সকালে শহরের মাহমুদাবাদ এলাকায়প্রথম আলো

হবিগঞ্জ শহরের পুরোনো খোয়াই নদকে ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে নান্দনিক করার জন্য তিন বছর আগে দুই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন নদের দুই পাড়ের পাঁচ শতাধিক স্থাপনাও উচ্ছেদ করে। কিন্তু প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখছে না।

এ প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবার দখল শুরু হয়েছে নদটি। এদিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হবিগঞ্জ শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ছিল খোয়াই নদ। এ নদের পানি বৃদ্ধি হলেই শহরের অধিকাংশে জলাবদ্ধতা দেখা দিত। এতে ১৯৭৬-৭৭ সালে নদের গতি পরিবর্তন করে বর্তমান স্থান থেকে দুই-তিন কিলোমিটার পশ্চিমে নিয়ে যাওয়া হয় নদকে। এ পরিবর্তনের কারণে পুরোনো অংশটি এখন পুরোনো খোয়াই নদ হিসেবে পরিচিত। শহরের মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদ। দখলের কারণে ২০০ ফুট প্রশস্তের এ নদ কোথাও ১০ ফুট, কোথাও ২০ ফুট আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতি থেকে নদকে রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খোয়াই নদ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প নামে ২০১৯ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের একটি অংশে শহরের এ পুরোনো খোয়াই নদকে যুক্ত করা হয়। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা প্রশাসন দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। নদীর মাছুলিয়া (ডায়াবেটিক হাসপাতালের পেছন) উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু খোয়াই সেতু পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালিয়ে পাঁচ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এমনকি অবৈধ স্থাপনা প্রশাসন ভাঙার আগেই নিজ নিজ উদ্যোগে দখলদারেরা নিজেরাই ভাঙা শুরু করেন। অবশ্য এর আগে জেলা প্রশাসন নদের প্রায় ৬০০ দখলদারকে চিহ্নিত করে। দখলকারীদের স্থাপনার লাল রং দিয়ে চিহ্নিতকরণ করা হয়।

খোয়াই নদ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবারও নদটি দখলে তাঁরা পুরোনো রূপে ফিরে গেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহরের মাছুলিয়া, ইনাতাবাদ, শায়েস্তানগর, মাহমুদাবাদ, শ্যামলী, পুরান মুন্সেফ আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নদীর দুই পারে নতুন করে স্থাপনা তৈরি করছে মানুষ। যাঁরা আগে দখলদার ছিলেন, তাঁরাই আবার নতুন ঘর তৈরি করছেন নিজেদের দখল ধরে রাখতে।

শহরের মাহমুদাবাদের বাসিন্দা সৈয়দ তৈয়বুর রহমান বলেন, মানুষ প্রথমে ভয়ে নিজেদের দখল ছেড়ে দেয়। কিন্তু দুই-তিন বছর ধরে লোকজন দেখতে পাচ্ছেন প্রকল্পের অগ্রগতি নেই। তাই আবার দখল শুরু করেছেন।

পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘পুরোনো খোয়াই নদ উদ্ধারে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন–সংগ্রাম করছি। প্রশাসন তিন বছর আগে উচ্ছেদ করে অনেক স্থাপনা। এতে হবিগঞ্জের মানুষ আশার আলো দেখতে পান। প্রশাসন তখন এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেছিল পুরোনো খোয়াইকে ঢাকার হাতিরঝিল আদলে নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ না এগোনোয় নদীর দুই পারের ভূমি আবারও দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের উচিত আবারও উচ্ছেদ অভিয়ান পরিচালনা করা।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পটি কী অবস্থায় আছে আমরা জানি না। তবে সম্প্রতি আমরা এ নদীর স্টাফ কোয়ার্টার অংশের পশ্চিম পারে ৫০০ মিটারের মতো কিছু জায়গা হাঁটা–চলাফেরার জন্য রাস্তা নির্মাণে কাজ শুরু করেছি। আরও বরাদ্দ পেলে ক্রমান্বয়ে পুরো নদটি দখলমুক্ত করে নান্দনিক করা সম্ভব।’

অতিরিক্ত ডিসি (রাজস্ব) বিজেন ব্যানার্জি বলেন, ‘শুনেছি দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায়নি।’ এতে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যায়নি। নদ দখলের বিষয়ে বলেন, নদ সরকারি সম্পদ, তা কেউ দখল করে রাখতে পারবে না। পুনরায় প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।