নওগাঁ
শীতেও লোডশেডিং, বোরো আবাদ ব্যাহত
চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে।
তীব্র শীতের মধ্যেও নওগাঁয় চাহিদার তুলনায় অন্তত ৩৮ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। পৌর শহরসহ জেলার ১১টি উপজেলায় তিন-চার দিন ধরে দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার লোডশেডিং হচ্ছে রাতেও। বিদ্যুতের অভাবে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ৩ লাখ ৯০ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে ৫২ হাজার বাণিজ্যিক, ১৫ হাজারের অধিক সেচপাম্প ও ২ হাজারের অধিক ছোট-বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের অধীনে তিন-চার দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট করে।
সদর উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি গভীর নলকূপের চালক সাইদুর রহমান বলেন, বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করা শুরু হয়েছে। জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ২৪ ঘণ্টাই সেচপাম্প চালু রাখতে হয়েছে। কিন্তু তিন-চার দিন ধরে দিনে ছয়-সাত ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে কথা হয় বর্ষাইল এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) থেকে দুই বিঘা জমিত জাবার (সেচ) দিতে চার ঘণ্টা লাগিছে। সকাল ৮টা থেকে জাবার শুরু হইছে, এর মধ্যে দুইবার কারেন্ট গেছে। কারেন্ট না গেলে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই জাবার শ্যাষ হয়ে য্যাত।’
অন্যদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মাধ্যমে নওগাঁ ও সান্তাহার পৌরসভা এলাকাসহ নওগাঁ সদর, বদলগাছি উপজেলার কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নওগাঁ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার দিন ধরে নওগাঁয় নেসকোর গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া গেছে ৫ থেকে ৬ মেগাওয়াট। এ কারণে নওগাঁ পৌরসভাসহ বেশ কিছু এলাকায় দিনের অর্ধেক সময়ই লোডশেডিং করতে হয়েছে।
পৌরসভার উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গতকাল আমার নতুন বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ছিল। লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সকাল নয়টার দিকে ঢালাই কাজ শুরু হওয়ার পর অন্তত চারবার লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। যে কাজ বেলা দুইটার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেই কাজ শেষ হয়েছে বিকেল পাঁচটায়। শীতকালে এত লোডশেডিং কোনো দিন দেখিনি।’
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদন। জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে চালকলগুলোতে আমন ধান থেকে চাল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১ হাজার ২০০ চালকল রয়েছে। কয়েক দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১১টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, জেলার কিছু কিছু এলাকায় কৃষকেরা ইতিমধ্যে বোরো ধান লাগানো শুরু করে দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোরো ধান লাগানো যাবে। সময়মতো জমিতে সেচ দিতে না পারলে বোরোর ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আশা করছেন কিছুদিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আধুনিক কৃষিব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অন্যতম প্রধান শর্ত।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নওগাঁ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় শীতের মধ্যেও এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক রবিউল হক বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা ৬৩ মেগাওয়াট থাকলেও তিন-চার দিন ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ করে। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু কারিগরি ত্রুটি ও জ্বালানিসংকটের কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে এই সমস্যা সাময়িক। কিছুদিনের মধ্যে এটা সমাধান হয়ে যাবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।