রাজবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ২৭০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রাজবাড়ীতে বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে শনিবার শহরে একটি বড় মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলা দুটিতে বিএনপির প্রায় ২ হাজার ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির ২৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতে রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বাদী হয়ে একটি এবং রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিধান চন্দ্র মল্লিক বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। সদর থানার মামলায় ১১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর রেলওয়ে থানার মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নেতৃত্বে শহরের সজ্জনকান্দার বড়পুল এলাকা থেকে দুপুর ১২টার দিকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়কের পৌরসভা, কোর্ট চত্বর, পান্না চত্বর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলের শেষের অংশ কোর্ট চত্বর প্রদক্ষিণ করার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।

আরও পড়ুন

সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ও গুলতিতে করে মার্বেল ছুড়ে মারতে থাকেন। তাঁরা সড়কের পাশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও তোরণ ছিঁড়ে ফেলেন। পুলিশও আদালতপাড়ার ভেতরে অবস্থান নিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় পিছু হটেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাসায় অবস্থায় নেন। পুলিশ ওই বাসা থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে বকুলতলায় অবস্থান নেয়। সেখানে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন বিএনপির কর্মীরা। পুলিশও বাসার দিকে এগিয়ে গিয়ে ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে ও কাঁদানে গ্যাস শেল ছোড়ে। এতে বিএনপির অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করবে না, এমন শর্তে নেতা-কর্মীরা বাড়ি চলে যান।

এদিকে দুপুর সোয়া একটার দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীদের একটি অংশ রাজবাড়ী রেলস্টেশনে উপস্থিত হয়। রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম-সংলগ্ন রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা। হুট করে অনেক মানুষের উপস্থিতি দেখে রেলওয়ে পুলিশ তাদের শান্তশিষ্টভাবে স্টেশনে অবস্থান করার কথা বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। স্লোগান দিতে থাকেন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) কয়েকজন আহত হন। পরে রেলওয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাঁদের ধাওয়া দেয়। আহত পুলিশ সদস্যরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ওসি সোমনাথ বসু বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে। তবে মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

রাজবাড়ী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান বলেন, মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য আসামিরা পলাতক আছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার আসামির আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ভাঙচুর ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়েছে। মিছিল থেকে অতর্কিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে ও জনদুর্ভোগ এড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, ‘মামলার এজাহারের কপি এখনো হাতে পাইনি। এজাহারের কপি হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে কথা বলব।’