খালে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ

এক বছর ধরে কাটাখালী খালে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পাউবো ও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভায় কাটাখালী খালে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হয়েছে। গত বুধবার ২ নম্বর টুকু সেতুর নিচে
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাটাখালী খালে বাঁশ ও ঘন জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একসময়ের বড়াল নদই এই এলাকায় বর্তমানে কাটাখালী নামে পরিচিত। দত্তবাড়ি গ্রামের আবুল কালাম এক বছর ধরে ওই খালে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক দীপক কুমার বলেন, নদী, শাখানদী, খালের অবাধ পানিপ্রবাহ বাধা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কাটাখালটিতে পানিপ্রবাহ ছিল না। ময়লা–আবর্জনা ও কচুরিপানা জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছিল। পৌর শহরের ভেতরে অনেক জায়গাতেই ময়লা–আবর্জনা ফেলার কারণে এটি আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল। প্রথমে পৌর কর্তৃপক্ষ খালে পানিপ্রবাহের উদ্যোগে নেয়। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে খালটি খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। খালটি খনন করে জেলা সদরের বাঐতাড়া এলাকায় জলকপাটের মাধ্যমে যমুনা নদী থেকে পানি প্রবাহিত করা হয়। সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ খালটি যমুনা নদীর সংযোগ স্থলে বড়াল নদীর উৎসমুখ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাঐতাড়া থেকে শহরের মিরপুর, বাজার স্টেশন, রেলওয়ে কলোনি পাশ দিয়ে গেছে। এটি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের পাশ দিয়ে, দত্তবাড়ি, জানপুর, বাহিরগোলা এবং চন্দ্রকোনা হয়ে কালিঞ্জার ভেতর দিয়ে ইছামতী নদীতে গিয়ে মিশেছে।

এক বছর আগে এই খালে বাঁশ ও জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ শুরু হয়েছে। এ কারণে পানিপ্রবাহ বাধা পাচ্ছে।

পৌর শহরের জানপুর মহল্লার বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম ও আবু হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ এলাকায় এই খালের ওপর নির্মিত দুই নম্বর টুকু সেতু থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিম সেতু পর্যন্ত খালের ৩০০ মিটার এলাকায় দত্তবাড়ি গ্রামের আবুল কালাম ও তাঁর সহযোগীরা মাছ চাষ করছেন। তাঁরা এই খালের সেতুর নিচে বাঁশ ও নেট-পাটার বেড়া দিয়েছেন। এতে খালে অবাধ পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, খালটিতে কারা বাঁশ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছেন, তা তিনি জানেন না। তিনি শুধু মাছ চাষের দেখভাল করেন। এ বিষয়ে তিনি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাশেদ ইউসুফের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এ সম্পর্কে রাশেদ ইউসুফে বলেন, ‘মাছ চাষ করে কাটাখালী খাল পরিচ্ছন্ন রাখা হবে, এমন প্রস্তাব নিয়ে এলাকার কিছু বেকার যুবক আমার কাছে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁদের পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলাম।’

সিরাজগঞ্জ পৌর সভার মেয়র সৈয়দ আবদুর রউফ গত বুধবার মুঠোফোনে বলেন, খালটি পরিচ্ছন্ন রাখতে কিছু বেকার যুবককে খালের কিছু এলাকা ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে আমি দেশের বাইরে। তারা কী করছে, সে বিষয়ে জানি না। দেশে ফিরে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’

পাউবোর সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, খালে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি দেখেছি। কাটাখালী খালে পানিনিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। এক-দুই দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।