শৃঙ্খলাভঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীসহ ৪৬ শিক্ষার্থীকে শাস্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকায় ৪৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নানা মেয়াদে বহিষ্কার, ভর্তি ও আবাসিকতা বাতিল এবং সতর্ক করা হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতা-কর্মীও রয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও দুই নেতাকে ‘সতর্ক’ করা হয়েছে।

গত ২২ অক্টোবর রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়।

রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ওই আদেশে ২১টি শৃঙ্খলা পরিপন্থী ঘটনায় শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী নির্যাতন, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, মাদকসংশ্লিষ্টতা, র‌্যাগিং, ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রক্সি দেওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন, পরে শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেটে বিষয়গুলো উঠে থাকে।

আদেশ অনুযায়ী, এক শিক্ষিকাকে হেনস্তার অভিযোগে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক উল্লাহকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আন্তবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা-২২ চলাকালীন এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) শিক্ষার্থী আবু সিনহাকে এবং আন্তবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে গণিত এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িত থাকায় গণিত বিভাগের সানজিদ হাসান আরিফ (অনার্স পর্যায়ে) ও হাফিজুর রহমানকে (মাস্টার্স পর্যায়ে) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ঘটনায় গণিত বিভাগের মহিউদ্দীন পাটোয়ারী ও কাউসার জাহান রবিনকে চূড়ান্ত সতর্ক এবং অমিত মণ্ডল ও এ কে এম বাশার অনিককে ক্ষমা করা হয়েছে। এর মধ্যে আবু সিনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।

আরও পড়ুন

অসদুপায় অবলম্বন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, অন্যের হয়ে প্ররীক্ষা (প্রক্সি) দেওয়া ও অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তা করার অভিযোগে লোকপ্রশাসন বিভাগের আল শামস তামিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইয়াছির আরাফাত, ফোকলোর বিভাগের নজরুল ইসলাম, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফজলুল করিম মাহিন, আইন বিভাগের শফিউল্লাহ, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিশির আহমেদ, মহিবুল মমিন ও স্বপন হোসাইন, ফিশারিজ বিভাগের আলিফ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের হাসিবুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শাকোয়ান সিদ্দিক এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রাজু আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা মামলাও চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

একই অভিযোগে পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবীবের ভর্তি বাতিল, ফোকলোর বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শোভনের ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। মুশফিক তাহমিদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত), হাসিবুল ইসলাম ও স্বপন হোসাইন গত কমিটির সহসম্পাদক। রাজু আহমেদ শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। শাকোয়ান সিদ্দিক ও মহিবুল মমিন শাখা ছাত্রলীগের কর্মী এবং মো. শোভন শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার ভাতিজা।

আরও পড়ুন

আদেশে বলা হয়েছে, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ, মাদকসেবন, র‌্যাগিং ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের পৃথক পৃথক ঘটনায় অভিযুক্ত ফিশারিজ বিভাগের অমর কুমার রায়, ফোকলোর বিভাগের সাইফুল ইসলাম, আরিফ বিন সিদ্দিক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সোহানুর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর সাহা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের নাঈম আলী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সোলায়মান, সংস্কৃত বিভাগের আল-আমিন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নজরুল ইসলাম, ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের মিনহাজুল আবেদীন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাজ্জাদ জামান সজীব, সাবিত হাসান, সৌরভ দত্ত, সংগীত বিভাগের কাওসার হামিদ, মেহেদী হাসান ও শাহরিয়ার আলম, নাট্যকলা বিভাগের লিনা মনজিলা, সমাজকর্ম বিভাগের নওরিন শর্মিলি শায়লি ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রাজু আহমেদকে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভাস্কর সাহা ও নাঈম আলী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোলায়মান সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এ ছাড়া এসব অভিযোগে ফাইন্যান্স বিভাগের মাহফুজুর রহমান এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের বাকি বিল্লাহর হলের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুনের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ায় ক্যাম্পাসে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা, আইন বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদের সনদপত্র বাতিল ও ক্যাম্পাসে আবস্থানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে মারধর ও ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ও সোলাইমানকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল শৃঙ্খলা কমিটি। সেই সঙ্গে অনাবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ায় তাঁদের দ্রুত হল থেকে অপসারণ করতে বলা হয়। হল প্রশাসনের করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতাও পায়। কিন্তু সিন্ডিকেট সভায় সাময়িক বহিষ্কারের সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া হলে অবৈধভাবে থাকায় হল প্রশাসনকে পাওনাদি পরিশোধসহ বিধিবিধান মেনে চলতে বলা হয়।