কক্সবাজারে ডেঙ্গু রোগী কমছে, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল

ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও কমছে। তবে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, আশ্রয়শিবিরগুলোতেও ডেঙ্গু কমতে শুরু করেছে। এর কারণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে জলাশয়, নালা, খাল ও বিলের পানি শুকিয়ে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে।

২৫০ শয্যার সরকারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য ১১৯ শয্যার পৃথক দুটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড রয়েছে। হাসপাতালের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গত বৃহস্পতিবার ভর্তি ছিলেন ৫৫ ডেঙ্গু রোগী। আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে এসেছেন ৪০ জনের বেশি রোগী। কমবেশি সবার সর্দি, জ্বর ও কাশি আছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে কথা হয়, শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিনের (৪৫) সঙ্গে। শাহাবুদ্দিন বলেন, ১৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এসে শয্যা পাননি। ফলে তাঁকে মেঝেতে থাকতে হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ওয়ার্ডে কয়েকটি শয্যা খালি পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগের কষ্ট যেমন, খরচও অনেক। গরিব মানুষের পক্ষে চিকিৎসার খরচ চালানো কঠিন ব্যাপার।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গত মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছেন রামু পশ্চিম মেরংলোয়া গ্রামের জানে আলম। তিনি বলেন, তাঁর এলাকার অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পড়ে আছেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করেন ১৫০ নারী ও পুরুষ। এর মধ্যে ২৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগের দিন ডেঙ্গু পরীক্ষা করান ১৯৮ জন। ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন ৪৩১ জন। আগস্টে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৭৮ ডেঙ্গু রোগী।

ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চিকিৎসক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে ১৩০ রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর চাপ আগের তুলনায় অনেক কমছে। আক্রান্তের হার কমে যাওয়ার কারণে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীও কমে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে প্লাটিলেট কিটের সংকট নেই। এখন ২০০ কিট আছে। আজ শনিবার আরও ২ হাজার (এনএস ১ কিট ও ডিটি ডিভাইস) কিট হাসপাতালে পৌঁছাবে।

আরও পড়ুন

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যমতে, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে জেলায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১১ হাজার ২০৭ জন, স্থানীয় ২ হাজার ৫২২ জন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৩ জন। এর মধ্যে ৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ১০ জন রোহিঙ্গা। ২০২২ সালে জেলায় ডেঙ্গুতে আত্রান্ত হয়েছিলেন ১৯ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা। তখন ডেঙ্গু রোগে মারা যান ৩৯ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ ও স্থানীয় বাসিন্দা ১৩ জন।

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। নানাভাবে চেষ্টা করেও আশ্রয়শিবিরগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বৃষ্টি না হওয়া এবং অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে সেখানকার খাল, বিল, জলাশয় ও রাস্তার পাশে জমে থাকা পানি শুকিয়ে গেছে। এ কারণে এডিস মশার প্রজনন কমে এসেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল থাকলেও কিছুদিনের মধ্যে কমে আসতে পারে। ডেঙ্গু সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতন করা হয়েছে। মশার কামড় থেকে রক্ষার জন্য ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা পরিবারে চার লাখের বেশি মশারি ও হাসপাতালে বিপুল কিট সরবরাহ করা হয়েছে।

আরআরআরসি কার্যালয়ের তথ্যমতে, আশ্রয়শিবিরগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি উখিয়ার কুতুলপালং, লম্বাশিয়া ও বালুখালী আশ্রয়শিবিরে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ঘনবসতি।

আরআরআরসি কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক আবু তোহা মো. আর হক ভূঁইয়া বলেন, জুন, জুলাই ও আগস্টে বৃষ্টির কারণে আশ্রয়শিবির এলাকার খাল, নালা, নর্দমায় যত্রতত্র পানি জমে এডিস মশার প্রজনন বেড়েছিল। এখন বৃষ্টি নেই, পড়ছে প্রচণ্ড গরম। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপও কমতে শুরু করেছে।