টাঙ্গাইলে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিনা পয়সায় ইফতারি

শ্রমজীবী, ছিন্নমূল নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে পথচারী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিদিন এখানে ইফতার করেন
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল শহরে ভিক্ষা করে পেট চালান বৃদ্ধা মাসুদা বেগম। নিয়মিত রোজা রাখলেও ইফতারে সুস্বাদু খাবার জোটানো তাঁর জন্য বেশ কঠিন। তবে মাসুদা নিয়মিত পেটপুরে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার দিয়ে ইফতার করছেন। এ জন্য তাঁর কোনো অর্থও খরচ করতে হয় না।

শুধু মাসুদা নন, তাঁর মতো নিম্ন আয়ের মানুষ ও সাধারণ পথচারীদের জন্য টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বরে প্রতিদিন বিনা মূল্যে ইফতারি বিতরণ করছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ত্রিবেণী’এবং টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি ’৯২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মানুষ বিনা পয়সায় এখানে ইফতার করতে পারছেন।

মাসুদা বেগম বলেন, এখানে বিনা পয়সায় ইফতারের আয়োজন করায় তাঁর খুব সুবিধা হয়েছে। রোজা রেখে পেটপুরে ইফতারের জন্য তাঁর কোনো চিন্তা করতে হয় না।

উদ্যোক্তারা বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এই দুই সংগঠন যৌথভাবে প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসজুড়ে ইফতারের আয়োজন করে। তবে করোনা মহামারির কারণে দুই বছর এই কর্মসূচি বন্ধ ছিল। গত বছর থেকে আবার শুরু হয়েছে সেই আয়োজন। এখানে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপি, ফলসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে রোজদারদের আপ্যায়ন করা হয়। আবার কোনো দিন খিচুড়ি-মাংসেরও আয়োজন করা হয়। সঙ্গে থাকে শরবত।

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, পুরো শহীদ মিনার এলাকায় ত্রিপল দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। বিকেলের শুরুতেই স্বেচ্ছাসেবীরা প্লেট, গ্লাস সাজানো কাজ শুরু করেছেন। কিছু সময়ের মধ্যে ভ্যানবোঝাই করে নিয়ে আসা হলো খিচুড়ির বড় হাঁড়ি। ইফতারের আধা ঘণ্টা আগে থেকেই দু-একজন করে মানুষ এসে বসতে শুরু করেন। শ্রমজীবী, ছিন্নমূল নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে পথচারী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে দেখা গেল ইফতারের এ আয়োজনে।

ইফতার করতে আসা জমেলা খাতুন ভিক্টোরিয়া সড়কে ছোট একটি চায়ের দোকান করেন। তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন এখানেই ইফতার করেন। ইফতারের সময় হলে দোকান বন্ধ করে এখানে চলে আসেন তিনি।

শাহীনুর মিয়া নামের একজন দিনমজুর বলেন, কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিয়মিত এখানে ইফতার করেন। এখানকার খাবারের মানও ভালো। নিয়মিত এই আয়োজন থাকায় তাঁর মতো স্বল্প আয়ের মানুষের খুব উপকার হয়েছে।

আলাপের ফাঁকেই ভেসে এল আজানের সুর। সড়কে চলা অনেক অটোরিকশা তখন থেমে গেল শহীদ মিনারের সামনে। রিকশা থেকে নেমে চালক-যাত্রীরা ঢুকে পড়লেন ইফতারের প্যান্ডেলে।

ইফতার শেষে শফিকুল ইসলাম নামের অটোরিকশার এক যাত্রী বলেন, তিনি ব্যক্তিগত কাজে ভূঞাপুর থেকে টাঙ্গাইল শহরে এসেছিলেন। পথে আজান দেওয়ায় তিনি এখানেই ইফতার করলেন। সড়কের পাশের বিনা মূল্যে এমন আয়োজনের জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ত্রিবেণীর সভাপতি মোমিনুল ইসলাম বলেন, তাঁদের সংগঠনের সদস্যরা চাঁদা দিয়ে এ আয়োজনের ব্যয় বহন করছেন। ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু খাওয়ালে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া খিচুড়ির আয়োজন করা হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সংগঠনের কয়েকজন সদস্য পুরো কাজের তদারক করেন। এর বাইরে ১০ থেকে ১২ জন মানুষকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পুরো মাস কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়।