শরীয়তপুরে শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে দুই চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুর আন্তজেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি এলিম পাহাড়ের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার দুপুরে ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।

ওই দুই চিকিৎসক হলেন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান ও চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইয়াছিন। তঁদের মধ্যে শাহরিয়ার ইয়াছিনকে মারধর করা হয়েছে। আর হাবিবুরকে ধাক্কা দেওয়া ও টানাহেঁচড়া করে গালিগালাজ করা হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এলমি পাহাড় পৌরসভার বালুচরা এলাকার বাসিন্দা। শনিবার একটি মারামারির ঘটনায় তাঁর কিশোর ছেলে মাথায় আঘাত পায়। তাকে নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে আসেন কয়েকজন।

খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন এলিম পাহাড়। জরুরি বিভাগে ওই কিশোরের চিকিৎসা চলছিল। দ্রুত কেন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, এমন কথা বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের গালমন্দ করতে থাকেন এলিম পাহাড়। এ সময় তিনি জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত নারী চিকিৎসক লিমিয়া সাদিনাকে গালমন্দ করলে সেখানে উপস্থিত চিকিৎসক শাহরিয়ার ইয়াছিন এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তখন তাঁর শার্টের কলার ধরে তাঁকে মারধর করা হয়। এ সময় ওই চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তছনছ করে ফেলে দেওয়া হয়। এমন ঘটনা শুনে জরুরি বিভাগে ছুটে যান সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর। তখন তাঁকে ধাক্কা দেওয়া ও টানাহেঁচড়া করা হয়। তাঁকেও গালিগালাজ করা হয়।

ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হলে সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ হাসপাতালে যান। ততক্ষণে এলিম পাহাড় ও তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। আর চিকিৎসকেরা এলিম পাহাড়ের কিশোর ছেলেকে অন্তর্বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহরিয়ার ইয়াছিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জরুরি বিভাগের একটি কক্ষে বসে একটি লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি চিকিৎসকদের গালাগালি করছিলেন। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করেন। আমরা পরিবার-পরিজন ফেলে মানুষের সেবা দিতে রাত-দিন হাসপাতালে থাকি। তারপরও যদি কেউ শারীরিকভাবে আঘাত করেন, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? আমি এর বিচার চিকিৎসকসমাজের কাছে দিয়েছি।’

হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক চিকিৎসককে রোগীর স্বজনেরা মারধর করছেন, এমন খবর পেয়ে জরুরি বিভাগে যাই। সেখানে যাওয়ার পর তাঁরা আমার ওপর চড়াও হন। ঘটনাটি পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তাঁদের সঙ্গে ও আমাদের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত পদক্ষেপ নেব।’

চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএর শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় চিকিৎসকেরা শঙ্কিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা দায়িত্ব পালন করতে সাহস পাচ্ছেন না। আমরা ওই ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তাঁর কঠোর শাস্তি না হলে আমরা কর্মবিরতির মতো আন্দোলন কর্মসূচি দেব।’

ঘটনাটি জানতে এলিম পাহাড়কে ফোন করা হয়। তিনি ফোন ধরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর আবার ফোন করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করার তথ্য পেয়েছি। ওই ঘটনার পুরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা সেখানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ওই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর চিকিৎসকেরা এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি।’