তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা জানাতে প্রদর্শনী

মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। শুক্রবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

মাটিতে অসহায় অবস্থায় বসে আছেন এক নারী। হাতে শাঁখা ও শাড়ি পরা নারীর দুই পাশে পায়ে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে ছোট্ট দুটি শিশু। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এক শরণার্থী নারীর ছবি। সাদাকালো ছবিটি সংগ্রহ করে প্রদর্শন করা হয়েছে ‘রণাঙ্গনে নারী’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন-সংলগ্ন মাঠে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন (বিভাগ)। প্রদর্শনীতে যুদ্ধের সময় নারীদের তোলা বিভিন্ন আলোকচিত্র, নারীদের অংশগ্রহণ ও যুদ্ধপরবর্তী নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরতে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

শনিবার সকালে দুই দিনব্যাপী ওই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ হোসেন। এ সময় সহ–উপাচার্য মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, বিভিন্ন স্কুলের (অনুষদ) ডিন, রেজিস্ট্রার, সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ বলেন, দেশের স্বাধীনতার পেছনে নারীদের বড় ভূমিকা ছিল। তরুণ প্রজন্মের কাছে ওই ভূমিকা তুলে ধরতেই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। মূলত শিক্ষার্থীরাই এর উদ্যোগ নিয়েছেন। সার্বিক সহযোগিতা করেছে ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তর। প্রদর্শনীর ছবিগুলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আর্কাইভসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা

গণহত্যা স্মরণে ‘মৃত্যুপুরাণ’

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা স্কুলের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন ‘মৃত্যুপুরাণ’ শীর্ষক গণহত্যা ও নির্যাতনবিষয়ক এক স্থাপনাশিল্পের উপস্থাপন করে। শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

প্রথমবারের মতো আয়োজিত প্রদর্শনীতে গণহত্যা ও নির্যাতন স্থাপনাশিল্পে ১০ মিনিটে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা উপস্থাপনায় অংশ নেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য মাহমুদ হোসেন।

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে চারুকলা স্কুলের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন ‘মৃত্যুপুরাণ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের উপস্থাপন করে
ছবি: প্রথম আলো

উপাচার্য বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে দখলদার বাহিনী নির্বিচার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিকল্পিত যে গণহত্যা চালায়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিত। এ রাতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে নির্বিচার হত্যা করা হয়। নৃশংস ওই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অপরাধীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি জানান তিনি।

মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একাত্তরের বধ্যভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা সব সময় সেই স্মৃতি ও আবেগ ধারণ করি এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা স্কুলের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিন ২৫ মার্চ গণহত্যা স্মরণে নতুন প্রজন্মের মধ্যে চেতনা সৃষ্টিতে স্থাপনাশিল্পের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সহ–উপাচার্য মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের প্রধান রাকিব হাসান। অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা স্কুলের ডিন মোছা. তাছলিমা খাতুন, কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন মো. রুবেল আনছার, চারুকলা স্কুলের ডিন নিহার রঞ্জন সিংহ, সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন আবদুল্লাহ আবু সাঈদ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।