১৭০ বছরের পুরোনো বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী, এসেছেন প্রতিষ্ঠাতা রাজার নাতি

নাটোরের দিঘাপতিয়া পিএন (প্রসন্ন নাথ) উচ্চবিদ্যালয়ের ১৭০ বছর পূর্তিতে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আসেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীছবি: প্রথম আলো

প্রায় পৌনে দুই শ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত নাটোরের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিঘাপতিয়া পিএন (রাজা প্রসন্ন নাথ) উচ্চবিদ্যালয়ে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। পুনর্মিলনীর এমন আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা রাজা প্রসন্ন নাথের নাতি অরুপ রায়ের আগমন।

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, শহর–সংলগ্ন দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চবিদ্যালয় ১৭১ বছরে পা দিয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫২ সালে। দিঘাপতিয়ার তৎকালীন রাজা প্রসন্ন নাথ রায় বাহাদুরের নামানুসারেই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়। সে সময় তিনি বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকার ট্রাস্ট করে দিয়েছিলেন এবং ৫ একরের কিছু বেশি জমি দান করেছিলেন। আয়োজকদের আমন্ত্রণ পেয়ে ভারতের কলকাতা থেকে ছুটে এসেছেন রাজা প্রসন্ন নাথের নাতি অরুপ রায়।

গতকাল সকাল ১০টায় বেলুন উড়িয়ে ১৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। পরে জাতীয় সংগীতে অংশ নেন প্রাক্তন-বর্তমান প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী। এরপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি উত্তরা গণভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্রদক্ষিণ করে বিদ্যালয়ের মাঠে মূল অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে আসে। সেখানে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার পর শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠান বৃষ্টিবিঘ্নিত হলেও অংশগ্রহণকারীদের আনন্দে ভাটা পড়েনি।

পুনর্মিলনীর এই আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা দিঘাপতিয়ার তৎকালীন রাজা প্রসন্ন নাথের নাতি অরুপ রায়ের (বাঁয়ে) আগমন। তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: প্রথম আলো

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৌনে দুই শ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, এটা গৌরবের। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন।

প্রতিষ্ঠাতা রাজা প্রসন্ন নাথের নাতি অরুপ রায় বক্তব্যের শুরুতেই অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় আয়োজকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি নাড়ির টানে এখানে ছুটে আসি। এখনো আমার বাবা-দাদার স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থাপনা ও চত্বর এখানে আছে। অল্প সময়ের জন্য এখনো এখানে এসে সেই সব স্মৃতি খুঁজে ফিরি। দাদুর হাতে গড়া বিদ্যালয় থেকে এখনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী গড়ে উঠছেন, এটা সুখের কথা, আনন্দের কথা।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নাফি-উল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মনসুর প্রমুখ।

উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য ও অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইসহাক আলী বলেন, সকাল থেকে রাত অবধি থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এতে অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হলেও অংশগ্রহণকারীরা বিরক্ত হননি। তাঁরা সারাক্ষণ উৎসব উপভোগ করেছেন, উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিরের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বিদ্যালয়জীবনের নানা স্মৃতি হাতড়ে সময় পার করেছেন।