প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই কাটা হচ্ছে গাছ, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে বন বিভাগ গাছ কাটার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে এ সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন এলাকাবাসী। আমরা হবিগঞ্জবাসীর ব্যানারে এ অবরোধ চলাকালে সড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে। সোমবার দুপুরে কলিমনগরে
ছবি: প্রথম আলো

রাস্তা বড় করার প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে ১ হাজার ২৪৬টি গাছ কাটছে হবিগঞ্জ বন বিভাগ। এ গাছ কাটার প্রতিবাদে আজ সোমবার বেলা দুইটায় এ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এ গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ শহরে নানা কর্মসূচি পালন করা হয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে।

হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কটি প্রায় ১০ কিলোমিটার। এ সড়কের দুই পাশে ২০১১ সালে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বনায়ন করে হবিগঞ্জ বন বিভাগ। আকাশমণি, শীল কড়ই, ম্যানজিয়াম, লোহা, মেহগনিসহ নানা জাতের এ গাছগাছালি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ছায়া দিয়ে আসছিল পুরো সড়কে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করত গাছগুলোর সবুজতা। এদিকে হঠাৎ বন বিভাগ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ১ হাজার ২৪৬টি গাছ কাটার দরপত্র আহ্বান করে। মাত্র সাড়ে ২১ লাখ টাকায় তিনজন ব্যক্তি অনুমোদন পান এ গাছ কাটার। তাঁরা সম্প্রতি সড়কের দুই পাশের গাছ কাটা শুরু করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) নানা সামাজিক সংগঠন এ গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি প্রশস্থ করা হবে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে এ গাছ কাটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ বন বিভাগের শায়েস্তাগঞ্জ কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ আহমদ বলেন, এ গাছগুলো ২০১১ সালে নবায়ন করা হয়। নিয়ম হচ্ছে, ১০ বছর পূর্ণ হলে এ গাছ কাটার। এ ছাড়া রাস্তার প্রশস্থতা বাড়বে। এ কারণে গাছ কাটা হচ্ছে। এ গাছ থেকে যে অর্থ আসবে তাঁর ৫৫ শতাংশ অর্থ পাবেন যে ব্যক্তি গাছগুলো রোপণ বা বনায়ন করেছেন তিনি। ২০ শতাংশ পাবে ভূমির মালিক। স্থানীয় ইউনিয়ন অফিস পাবে ৫ শতাংশ, বন বিভাগ পাবে ১০ শতাংশ। নতুন করে বনায়নের জন্য বন বিভাগ আরও পাবে ১০ শতাংশ।

এদিকে বন বিভাগের এ গাছ কাটা নিয়ে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের ভাষ্য, প্রকল্পের নামে অযথাই এ গাছগুলো কাটা হচ্ছে। তাঁরা এ গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানান।

আজ বেলা একটায় ‘গাছ কাটা যাবে না’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ সড়কে কাটা গাছে কাফনের কাপড় পরিয়ে অবরোধ করেন একদল তরুণ–তরুণী। তাঁরা আমরা হবিগঞ্জবাসীর ব্যানারে ‘গাছ কেটে তথাকথিত উন্নয়ন চাই না’ স্লোগান দেন। এ সময় কিছু সময়ের জন্য হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। আগামীকাল মঙ্গলবারও তাঁরা একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।

একই দিন বেলা দুইটায় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে গাছ কাটার প্রতিবাদে হবিগঞ্জবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নানা শ্রেণি–পেশার লোকজন। সভায় বক্তারা বলেন, এলাকাবাসীকে কোনো প্রকার ধারণা না দিয়ে বন বিভাগ চুপি চুপি এ গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছে। এ গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানান তাঁরা। এতে বক্তব্য দেন বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, তাহমিনা বেগম গিণি বিজন বিহারী দাস প্রমুখ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘এই উন্নয়নের সময়ে যখন গাছ রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করছি, তখন বন বিভাগ এভাবে গাছ কেটে ফেলে শুধু পরিবেশের ক্ষতি করেনি, রাস্তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। আশ্রয়হীন হয়েছে পাখি। বন বিভাগ এ ব্যাপারে লুকোচুরি করছে।’

এ গাছ কাটার বিষয়ে হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সল বলেন, বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ২০২১ সালে এ গাছগুলো লাগায়। বন বিভাগ এই গাছ কাটার জন্য জেলা বন ও পরিবেশ কমিটি বরাবর আবেদন করলে ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ গাছগুলো কাটা হচ্ছে। হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কটি দুই লেন করতে একটি ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। তবে সেটি এখনো অনুমোদন পায়নি।