মনোনয়ন ফরম নিলেন বদি-শহীন দম্পতি, আছেন আরও ৮ নেতা

আবদুর রহমান বদি ও শাহীন আক্তার
ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও তাঁর স্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার। গতকাল রোববার তাঁরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন আরও আট নেতা।

গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রহমান বদি। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদির পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনিও নির্বাচিত হন।

বদি-শাহীন দম্পতি ছাড়াও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শাহ আলম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, সমাজকর্মী মনোয়ারা বেগম মুন্নী চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা নেতারা বেশির ভাগ বদির বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলের  মনোনয়ন চেয়েছিলেন। উখিয়া-টেকনাফকে মাদকমুক্ত করার বিষয়ে কয়েক বছর ধরে তিনি কাজ করছেন। সোহেল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে টেকনাফ ও উখিয়াতে মাদকের বিস্তার শতগুণ বেড়েছে। কেন বেড়েছে, কারা মাদকের সঙ্গে জড়িত, এলাকার মানুষ জানেন।

শাহীন আক্তার আওয়ামী লীগের কেউ না দাবি করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তিনি (শাহীন) এবার দলের মনোনয়ন পাবেন না। এ কারণে তাঁর স্বামী আবদুর রহমান বদি এবারও দলের মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ২০২২ সালের ২৪ জুলাই একাংশের বয়কটে হওয়া টেকনাফ পৌরসভা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বদি সভাপতি নির্বাচিত হলেও আগের কোনো কমিটিতে তাঁর নাম ছিল না। উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের নেতা-কর্মীদের কেউ বদির সঙ্গে নেই।

একই কথা বলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদও। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁর বাবা মোহাম্মদ আলী।

দলের নেতাদের অভিযোগ, শাহীন আক্তার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গত পাঁচ বছরে তিনি দলীয় কোনো সভা-সমাবেশ, জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও মাসিক সমন্বয় কমিটির সভাতে যাননি। এমনকি গত পাঁচ বছরে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দফায় কক্সবাজার গিয়ে দলীয় জনসভা করেছেন। সেখানেও শাহীন আক্তার অনুপস্থিত ছিলেন। স্ত্রীর (সংসদ সদস্য) হয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন বদি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পর ওই বছরের অক্টোবরে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিন সপ্তাহ কারাভোগ করেন বদি। সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ওই মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় ২০১৬ সালে বদিকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। ওই সাজার বিরুদ্ধে বদির করা আপিল এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে।  

মামলার কারণে নির্বাচন করতে সমস্যা নেই জানিয়ে আবদুর রহমান বদি বলেন, এবারও দলের মনোনয়ন তিনি পাবেন। কারণ, এ আসনে নৌকাকে জিতিয়ে আনার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তি আর নেই। বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করাসহ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বদি বলেন, গত ১৫ আগস্টের শোক দিবসে নিজের উদ্যোগে তিনি উখিয়া-টেকনাফে ৯৮ হাজার মানুষকে গরুর মাংস দিয়ে খাইয়েছিলেন। ১৫ বছর ধরে তিনি এলাকার মানুষকে চাল–ডাল–তেলসহ নগদ অর্থসহায়তা দিয়ে আসছেন। এলাকার উন্নয়নও হয়েছে অনেক। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দলের কিছু নেতা মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন।

স্ত্রী শাহীন আক্তার প্রসঙ্গে আবদুর রহমান বদি বলেন, তিনিও দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দলের প্রার্থী কে হবেন, এই সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার হাতে। এলাকায় শাহীন আক্তারের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে বদি বলেন, তিনি যদি এলাকায় না থাকেন, এত উন্নয়ন কীভাবে হলো। জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন সংসদে গিয়ে কথা বলার জন্য। সংসদে তিনি একবারও অনুপস্থিত ছিলেন না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বদির নাম রয়েছে। তালিকায় আছেন বদির ভাইসহ পরিবারের অন্তত ২৬ জনের নাম। এ প্রসঙ্গে বদি বলেন, তালিকায় নাম থাকলেও তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত কিংবা মাদক ব্যবসায়ী থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন, এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেন না।