১২ ঘণ্টায় ৩ হাজারের বেশি পিঠা বিক্রি করেন রাজা মিয়া

‌সিলেটের দ‌ক্ষিণ সুরমা মু‌ক্তিযোদ্ধা চত্বরে রাজা মিয়ার দোকানে নুনগড়া পিঠা ‌ভিড় জমে মানুষের।
ছ‌বি: প্রথম আলো

রাস্তার পাশেই চায়ের দোকান। দোকানে কড়াইয়ের তেলে ভাজা হচ্ছে গরম–গরম পিঠা। সেই পিঠা খেতে মানুষের ভিড়। কড়াই থেকে পিঠা নামাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কড়াই থেকে পিঠা নামাতেই ক্রেতারা হাতে হাতে নিয়ে নিচ্ছেন পিঠা। গরম থাকায় ফুঁ দিয়ে মুখে পুড়ে দিচ্ছেন অনেকে। পিঠার পাশাপাশি চায়ের কাপেও চুমুক দিচ্ছেন অনেকে। পিঠা খেতে খেতে চলে আড্ডাও। পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি অনেকে ঘরের জন্য পিঠা নিয়ে যান। আবার অনেকে গরম–গরম শিঙারাও খাচ্ছেন।

সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার মুক্তিযোদ্ধা চত্বরঘেঁষা একটি দোকানের প্রায় প্রতিদিনকার চিত্র এটি। দোকানটি পরিচালনা করেন রাজা মিয়া। তাঁর বাসা সিলেট নগরের কদমতলী এলাকায়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজা মিয়ার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড়। অনেকের হাতে প্লাস্টিকের প্লেটে গরম–গরম পিঠা। দোকানের পরিচালক রাজা মিয়ার (৫৫) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোকানে তিনি দুই ধরনের পিঠা বিক্রি করেন—নুনগড়া ও সন্দেশ পিঠা। এ ছাড়া শিঙাড়া ও চা বিক্রি করেন। দুই ধরনের পিঠা মিলে প্রায় তিন হাজারের বেশি পিঠা বিক্রি করেন রাজা মিয়া। প্রায় তিন বছর ধরে নুনগড়া পিঠা বিক্রি শুরু করেন তিনি। এর আগে সন্দেশ, পেঁয়াজু, শিঙাড়া ও চা বিক্রি করতেন। নুনগড়া পিঠা বিক্রি শুরু করার পর থেকে গ্রাহক বেড়েছে তাঁর।

পিঠা খেতে আসা পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেলে কিংবা রাতে হালকা নাশতার জন্য পিঠা সবারই প্রিয়। সিলেটে সাধারণত নাশতায় যে পিঠা সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়, সেটি নুনগড়া। এই পিঠাকে অনেকে নুনের পিঠা কিংবা নুনিয়া পিঠা বলে থাকেন। সাধারণত চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি এ পিঠা সিলেটের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। চালের গুঁড়ার পাশাপাশি হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা দিয়ে তৈরি করা হয়। ছোট আকারের গোলাকার এ পিঠার চাহিদা রয়েছে সবার কাছেই। পাশাপাশি রাজা মিয়া গুড় ও মৌরি মিশিয়ে মিষ্টিজাতীয় সন্দেশ পিঠাও তৈরি করেন। দুটি পিঠাই সবার কাছে প্রিয়।

‌সিলেটের দ‌ক্ষিণ সুরমা মু‌ক্তিযোদ্ধা চত্বরে রাজা মিয়ার দোকানে নুনগড়া পিঠা ‌খেতে ভিড়
ছ‌বি: প্রথম আলো

রাজা মিয়ার দোকানে পিঠা খেতে আসা সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা সাব্বির আহমদ বলেন, তিনি প্রায়ই বন্ধুদের নিয়ে রাজা মিয়ার দোকানে নুনগড়া পিঠা খেতে আসেন। নুনগড়া পিঠা তাঁর খুব পছন্দের। পিঠা খেতে আসা দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা তারেক আহমদ বলেন, প্রায়ই তিনি দোকানটিতে পিঠা খেতে আসেন। তাঁর কাছে নুনগড়া পিঠা বেশি ভালো লাগে। অনেক সময় এ পিঠা খেতে এসে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়।

রাজা মিয়ার দোকানে কাজ করেন পাঁচজন কর্মী। তাঁরা সবাই বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজা মিয়ার সঙ্গে থাকেন। পিঠা বানানোর কাজ করেন রাজা মিয়াসহ তিনজন। তবে একসঙ্গে তিনজনই পিঠা বানান না। কয়েক ঘণ্টা একজন পিঠা বানানোর কাজ করেন, কিছু সময় বিরতি নিয়ে অন্য আরেকজন পিঠা বানানোর কাজ করেন। এ সময় অন্যরা পরিবেশন কাজে সহায়তা করেন।

রাজা মিয়ার দোকানে পিঠা বানানোর কাজ করেন সুনামগঞ্জের বাসিন্দা মো. আলী (৩৫)। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০টি নুনগড়া পিঠা বিক্রি করেন তাঁরা। এ ছাড়া সন্দেশ পিঠা বিক্রি হয় প্রায় একই পরিমাণে। শিঙাড়া বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০টি। নুনগড়া পিঠার চাহিদা বেশি থাকায় বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

রাজা মিয়া জানান, সিলেটে প্রায় প্রতিটি ঘরেই নারীরা নুনগড়া পিঠা তৈরি করেন। তবে অভিজ্ঞতা না থাকলে চালের এ পিঠা বানানো মুশকিল। অনেক সময় চালের গুঁড়া ও পানি পরিমাণমতো না হলে পিঠা বানানোর মতো উপযুক্ত হয় না। আবার পরিমাণমতো উপকরণ না দিলে খেতে ভালো লাগে না। তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে চায়ের দোকান দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন পিঠা, শিঙাড়া বিক্রি করেন। পিঠা, শিঙাড়া প্রতি পিস ১০ টাকা করে বিক্রি করেন।

পিঠা বিক্রি করে ভালো উপার্জন হচ্ছে জানিয়ে রাজা মিয়া বলেন, অনেকে আয়ের দিকটিই দেখেন, কিন্তু এর পেছনের পরিশ্রম, সেটি দেখেন না। পিঠা বানানোর জন্য আগে চালের গুঁড়াসহ বিভিন্ন উপাদান তৈরি করতে হয়। সেগুলো দোকান খোলার আগেই প্রস্তুত করে রাখতে হয়। এ জন্য প্রতিদিন কিছুটা বিলম্বে দোকান খোলা হয়। দোকানদারি মাত্র ১২ ঘণ্টার হলেও এর পেছনে সারা দিন ব্যয় হয় তাঁর। এরপরও তিনি তাঁর ব্যবসায় খুশি।