হুইপ আবু সাঈদের জমা ও বিনিয়োগ বেড়েছে ২২ গুণের বেশি

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন

জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদের (স্বপন) গত ১০ বছরে আয় ও স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। দশম ও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আবু সাঈদ ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-২ (আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল) আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি হুইপ হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

এই ১০ বছরে আবু সাঈদের বার্ষিক আয় লাখ থেকে কোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে। আয় বেড়েছে তাঁর স্ত্রী ও নির্ভরশীলদেরও। দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ব্যবসা থেকে ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫২০ টাকা। একই খাত থেকে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ছিল ১১ লাখ টাকা। সর্বশেষ হলফনামায় আবু সাঈদের ব্যবসা ও হুইপ হিসেবে পাওয়া বেতন–ভাতা থেকে বার্ষিক আয় ১ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৫২ টাকা। ব্যবসা থেকে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় ২৪ লাখ টাকা। এই হিসাবে হুইপের আয় বেড়ে তিন গুণের বেশি হয়েছে। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

দুই হলফনামা থেকে দেখা গেছে, ১০ বছর আগে শেয়ারসহ নানা খাতে আবু সাঈদের বিনিয়োগ ছিল ৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রী ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের এই খাতে কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এখন শেয়ারবাজারে তাঁর নিজের ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা, স্ত্রীর ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ১০০ টাকা এবং নির্ভরশীলদের নামে ৫ লাখ ১১ হাজার ৩০০ টাকা বিনিয়োগ আছে। সেই হিসাবে তাঁর পরিবারের বিনিয়োগ বেড়েছে ২২ গুণের বেশি।

বিনিয়োগের পাশাপাশি হুইপ পরিবারের ব্যাংকে জমার পরিমাণ ২২ গুণের বেশি বেড়েছে। দশম নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ ছিল, ব্যাংকে আবু সাঈদের ৩২ হাজার ৫৬৪ টাকা ও তাঁর স্ত্রীর ২৩ হাজার ৯৬ টাকা মিলিয়ে মোট জমা ৫৫ হাজার ৬৬০ টাকা। এবারের হলফনামা অনুযায়ী ব্যাংকে হুইপ পরিবারের মোট জমা আছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ১৭ টাকা।

আবু সাঈদের আগে কোনো গাড়ি ছিল না। এখন তাঁর ৬৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৪৬ টাকা মূল্যের একটি এসইউভি গাড়ি আছে। ১০ বছরে আবু সাঈদ ও তাঁর স্ত্রীর স্বর্ণের পরিমাণ ৭০ ভরি থেকে বেড়ে ৯০ ভরি হয়েছে।

অস্থাবর সম্পদের পাশাপাশি আবু সাঈদ পরিবারের স্থাবর সম্পদ বেড়েছে। নিজের নামে কৃষিজমি না বাড়লেও ১০ বছরে তাঁর স্ত্রীর নামে ৩ লাখ টাকা মূল্যের ৩০ শতাংশ এবং নির্ভরশীলের নামে ১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার ৩৭৪ শতাংশ জমি হয়েছে। ১০ বছর আগে আবু সাঈদের সাড়ে ১৭ হাজার টাকা মূল্যের সাড়ে ৫ শতাংশ জমি ছিল। ১০ বছরের ব্যবধানে এই জমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৩১ টাকা মূল্যের সাড়ে ৭৪ শতাংশ জমি এবং পূর্বাচলের ২১ লাখ টাকা মূল্যের সাড়ে ৭ কাঠার প্লট। তাঁর স্ত্রীর নামে ৭৪ শতাংশ জমি, সাভারে ৫ শতাংশ জমি হয়েছে; তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৫ কাঠা জমি কেনার জন্য ৭৫ লাখ টাকা বায়না দিয়েছেন। তাঁর নির্ভরশীলের নামে জয়পুরহাটে দেড় কোটি টাকার বেশি মূল্যের জমি আছে। হুইপের নামে এখনো কোনো ফ্ল্যাট নেই, তবে ফ্ল্যাট কেনার জন্য তিনি ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর নামে আগের থাকা একটি বাড়ির পাশাপাশি ফ্ল্যাট কেনার জন্য এক কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া আছে।

বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আবু সাঈদের নগদ আছে মাত্র সাড়ে চার লাখ টাকা। সংসদ সদস্য হওয়ার আগে তাঁর কোনো ব্যাংকঋণ না থাকলেও এখন তাঁর ঋণের পরিমাণ ৭৬৪ কোটি টাকার বেশি।