অনেক নাটকীয়তার পর সেই শিক্ষার্থীকে সিট ফিরিয়ে দিল প্রশাসন

দখল করে নেওয়া সিট ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকির হোসেন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন
ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের সেই শিক্ষার্থীর দখল হয়ে যাওয়া সিট ফিরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। অনেক নাটকীয়তার পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের দখল করে নেওয়া ওই সিট তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম ও তাঁর লোকজন ১৩৫ নম্বর কক্ষের একজন ছাত্রের বিছানাপত্র ফেলে দিয়ে আরেক ছাত্রকে ওই সিটে ওঠান। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. জাকির হোসেন। তিনি হলের ১৩৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দখলে নেওয়ার পর গতকাল বুধবার সিট উদ্ধারে প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগের নেতা তাঁর অভিযোগের কিছু অংশ পরিবর্তন করিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু এরপরও হল প্রাধ্যক্ষের কথামতো ওই শিক্ষার্থীকে নির্ধারিত সময়ে সিট ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বেলা আড়াইটার দিকে সিট ফিরে পাওয়ার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিছানাপত্র নিয়ে অবস্থান নেন জাকির হোসেন। পরে বিকেলের দিকে হল প্রশাসন ওই শিক্ষার্থীর সিট ফিরিয়ে দিয়েছে।
জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে তাঁকে তাঁর সিট ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে হল প্রাধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উল্টো আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিন ইসলামের সঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষ তাঁকে (জাকির) নিয়ে সভা করেন। সেখানে হল প্রাধ্যক্ষ আগের দিনের দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে একটি লাইন বাদ দিতে বলেন। তিনি সেটি বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন। সভায় প্রাধ্যক্ষ বলেছিলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগের তুলে দেওয়া শিক্ষার্থী সরে যাবেন। কিন্তু ওই সভা থেকে বের হয়েই ছাত্রলীগ নেতা মোমিন তাঁকে বলেছেন, ‘এখন কী করতে পারিস করিস?’

গতকাল বুধবার দেওয়া অভিযোগে জাকির উল্লেখ করেছিলেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি রাত ১০টার সময় ছাত্রলীগের হল সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) মোমিন ও তাঁর ছেলেরা এসে জিজ্ঞেস করেন, “তোমাকে কে এই রুমে তুলেছে?” উত্তরে প্রাধ্যক্ষ স্যারের কথা বললে তিনি বলেন, “এটা আমার সিট, প্রাধ্যক্ষ তোলার কে?” এরপর আমাকে ও প্রাধ্যক্ষ স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং ২৯ জানুয়ারির পর কক্ষ ছেড়ে দিতে বলেন। কক্ষ না ছাড়লে মারার হুমকি দেন। এর মধ্যে কক্ষ না ছাড়ায় গতকাল রাতে এসে আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিছানাপত্র ফেলে দিয়ে অন্য একজনকে তোলেন। এতে আমি রুমে অবস্থান করতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমি চরম অনিরাপত্তায় ভুগছি।’

জাকির বলেন, ছাত্রলীগের সিট দখলের বিষয়ে তিনি যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন, তা থেকে ‘এরপর আমাকে ও প্রাধ্যক্ষ স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন’—এই কথাটুকু প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগ বাদ দিতে বলেন। এই কথাটুকু বাদ দিয়ে তিনি পরে লিখেছেন, ‘আমাকে এবং স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করার বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল। ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মোমিন ইসলাম ভাই এই কাজ করেননি।’ জাকিরের অভিযোগ, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে গিয়েও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাঁকে শাসিয়ে এসেছেন।

বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে যাওয়ার বিষয়ে জাকির বলেন, হল প্রাধ্যক্ষের ওপর থেকে তাঁর ভরসা কমে গিয়েছিল। এ ছাড়া তিনি নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছিলেন। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেবেন। ১৫ মিনিট সেখানে ছিলেন। পরে সেখানে প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের কয়েকজন আসেন কথা বলতে। এরই মধ্যে হল প্রাধ্যক্ষ এসে তাকে নিয়ে গিয়ে তাঁর সিটে তুলে দেন। তবে এত ঘটনার পর তিনি এখনো ভয়ে আছেন।  

এ ব্যাপারে জানতে হল প্রাধ্যক্ষ একরামুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সমাধান হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার হলে তাঁর ডিউটি ছিল। তিনি বলেছিলেন, তিনি এসে জাকিরকে তুলে দেবেন। কিন্তু সময় না দিয়ে বিছানাপত্র নিয়ে জাকির প্রশাসন ভবনে চলে আসেন। পরে বিকেলেই তাঁকে সিট দেওয়া হয়েছে।

পুনরায় লিখিত অভিযোগ নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ছাত্রই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করে এসেছিলেন। এসে ওই ছাত্র বলতে থাকেন, মোমিন তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করেননি। পরে তিনি আরেকটি লিখিত অভিযোগ নেন।
হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোমিন ইসলাম বলেন, হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টা সমাধান হয়েছিল। তাঁদের তুলে দেওয়া ছাত্রকে আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও ওই ছাত্র গিয়ে বিছানাপত্র নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন।