আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সংসদ সদস্য ও আ.লীগ নেতার

নাটোরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ও নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সভায় তাঁরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। এ নিয়ে সভায় উত্তেজনা তৈরি হলে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা দুজনকেই থামিয়ে দেন।

শরিফুল ইসলাম সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর শফিকুল ইসলাম সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞার সভাপতিত্বে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা শুরু হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনো বাধা নেই। এ জন্য তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আহাদ আলী সরকারের পক্ষে কাজ করছেন। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে কাফুরিয়া এলাকায় ছিলেন। তখন নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের লোকজন তাঁদের ওপর চড়াও হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাঁর সমর্থকদের ওপর এমন কর্মকাণ্ড করার সুযোগ নেই।

শরিফুল ইসলামের বক্তব্যের এ পর্যায়ে সভাকক্ষে ঢোকেন কমিটির উপদেষ্টা সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। শরিফুল ইসলাম বক্তব্যের মধ্যে অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য অন্যায়ভাবে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে ব্যক্তিগত নির্বাচনী কার্যালয়ে পরিণত করেছেন। এতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। তিনি সংসদ সদস্যের উদ্দেশে দ্রুত তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে গুটিয়ে অন্যত্র নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর সমান সুযোগ তৈরির অনুরোধ করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের বক্তব্যের পর সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। তিনি শরিফুল ইসলামের বক্তব্যের জবাবে বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। ১৮ ডিসেম্বরের পর কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা আসবে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে দলীয় প্রার্থীর কার্যালয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সেখানে দলের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য নেতা-কর্মীরা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, এটা স্বাভাবিক।’ এ সময় শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ করেন তিনি।

সংসদ সদস্যের বক্তব্যের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম কথার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলে জেলা প্রশাসক তাঁকে থামতে বলেন। তিনি জবাব দিতে অনড় থাকলে সংসদ সদস্যও তাঁর বক্তব্য চালিয়ে যেতে চান। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সভায় উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক উভয়কে থামার নির্দেশ দেন এবং পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলামকে পরবর্তী বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করেন।

আরও পড়ুন

সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, এটা নিয়মিত মাসিক সভা। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের সভা নয়। প্রয়োজনে তিনি রাজনীতিবিদদের নিয়ে সভা করবেন। সেখানে তাঁরা রাজনৈতিক কথা বলবেন। তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকার বহাল থাকলেও আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। কমিশন যে বিধিবিধান প্রয়োগ করতে বলেছে, আমরা তা প্রয়োগ করব। এ ক্ষেত্রে কে কোন দলের তা দেখব না।’