যশোরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার যুবদল নেতার মৃত্যু, চিকিৎসাপত্রে লেখা ‘পাবলিক অ্যাসল্ট’
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার যুবদলের এক নেতাকে কারাগারে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
যুবদলের ওই নেতার নাম উজ্জ্বল বিশ্বাস (৩৯)। তিনি কেশবপুর পৌর যুবদলের সদস্য এবং একই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেনের ছোট ভাই। তাঁর নামে থানায় ১০টি মামলা আছে বলে জানিয়েছেন কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে উজ্জ্বলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন উপজেলার ভোগতী গ্রামের পলাশ (৩৫), আলমগীর হোসেন (৪০) এবং মূলগ্রামের রাসেল (২৩)। তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, উজ্জ্বল বিশ্বাসকে তাঁরা রাত সাড়ে ৯টায় কারাগারে পান। সেখানে ডাক্তারি সার্টিফিকেটে লেখা ছিল ‘পাবলিক অ্যাসল্ট’। তখন উজ্জ্বল স্বাভাবিক ছিলেন। কারাগারের সব কাজ শেষে উজ্জ্বলকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কারাগারের ভেতরের মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। জেলারের ধারণা, উজ্জ্বলের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ছিল। মেডিকেল সেন্টারে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উজ্জ্বল বিশ্বাসের বড় ভাই কেশবপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যশোরে যাচ্ছেন লাশ নেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, যেকোনো মানুষ অপরাধী হতে পারে। কিন্তু কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা উচিত নয়। যা হওয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত ছিল। লাশ পাওয়ার পরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা যুবদলের সদস্যসচিব আনসারুল হক বলেন, ‘কেশবপুরে যুবদলের কোনো কমিটি নেই। আহ্বায়ক কমিটিতে উজ্জ্বল মিয়ার নাম ছিল। কিন্তু সেই কমিটি অনুমোদন হয়নি। তিনি যুবদলের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সংগঠন থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়’।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের পর উজ্জ্বল মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুম-খুন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা বিপ্লব করে যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে, সেই পরিবর্তিত বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে কারও মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানার জন্য যশোরের পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে, ‘মিটিংয়ে আছি’ খুদে বার্তা দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তাঁরা।