আশুগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে আ.লীগের নির্বাচনী জনসভা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কে ভি উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে নির্বাচনী জনসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সমর্থনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ জনসভা করে। সভা শেষে বিকেল পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির অন্তত আটজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলে, সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হয়। দুটি ক্লাস হয়েছে। এরপর আর কোনো পাঠদান হয়নি।

এ উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে (আজ সোমবার সকাল আটটা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত) জনসভা ও মিছিল করার অনুমতি নেই। ফলে এ জনসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধিও লঙ্ঘিত হয়েছে।

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর ১২টার দিকে সভা শেষ হয়। বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ছিল না। আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যেই সভা শেষ করা হয়েছে। আর সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীকে আমরা জোর করে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি কোনো বক্তব্য দেনননি।’  

আড়াইসিধা কে ভি উচ্চবিদ্যালেয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে জনসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাঠদান বন্ধ ছিল না। পাঠদান চলছিল। পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগটি সত্য নয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কে ভি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সমর্থনে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া ও  সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের আহমদ, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জনসভা শেষে করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ছবি: প্রথম আলো

সভায় মঞ্চে বসা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান স্থানীয় নেতারা। এ সময় সভার প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আহমেদ হোসেন বক্তৃতা দিতে এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণার সময় শেষ হয়ে গেছে। আমরা নিয়ম ভঙ্গ করব না। তাই সভা এখানে সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো।’

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, নির্বাচনী জনসভা শেষে হলে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আড়াইসিধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম মিয়ার সঞ্চালনায় ও আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েমের নেতৃত্বে এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নির্বাচনী জনসভা শুরু হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে মাঠে ঘুরে বেড়ায়। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ইভিএমে ভোটের অনুশীলন চলে। সেই সময়ে বিদ্যালয়ের মাঠে প্যান্ডেলে চলছিল গান। মাঠের ভেতরে ও বাইরে চারটি মাইক ও দুটি লাউড স্পিকারে গান বাজানো হয়।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুলফিকার হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কল করেও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম মিয়া মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম কল ধরেননি।  

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আরবিন্দ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিধিমালা অনুসারে ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধ করতে হয়।