ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ

ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে গোলাগুলি, বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে গোলাগুলি, বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কান্দিপাড়ার সাধারণ মানুষ।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তিন দিন ধরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা ছাত্রদলের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এরই মধ্যে জেলা কৃষক দল ও ছাত্রদলের চার নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, গতকাল রাতে কান্দিপাড়ার দক্ষিণ দিক থেকে দু–তিন শ নেতা-কর্মী কান্দিপাড়ার জমিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার দিকে এগিয়ে আসেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেতা-কর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা গুলিও ছুড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে জেলা যুবদল ও জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরাও ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহীনুর রহমানকে আহ্বায়ক, সমীর চক্রবর্তীকে সদস্যসচিব ও পাঁচজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এর মধ্যে সমীর চক্রবর্তী আগের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পাওয়া ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান ওরফে সানির বড় ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়ার অনুসারী বলে পরিচিত। কবির আহমেদ সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা। আগামী এক মাসের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন রুবেল চৌধুরী।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফের কান্দিপাড়ার বাসায় সদ্যঘোষিত জেলা ছাত্রদলের কমিটির সদস্যদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী ও সাবেক সদস্যসচিব মহসিন মিয়ার নেতৃত্বে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আবু শামীমের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। একই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রুবেল চৌধুরীর নেতৃত্বে কান্দিপাড়ায় সদ্যঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমানের বাসায় এবং জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর কাউসার মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা সদস্যসচিব সমীর চক্রবর্তীর পাইকপাড়ার বাসা ঘেরাও করেন। এরপর শহরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে রুবেল চৌধুরীর নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কৃষক দল ও ছাত্রদলের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় ২০ থেকে ২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘নরসিংদীর অবস্থার জন্য আমরা প্রস্তুত। প্রয়োজনে নরসিংদীর চেয়ে ভয়ংকর হবে।’ এর কয়েক ঘণ্টা পরই রাতে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের পর জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ককে উদ্দেশ্য করে ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘শেয়ালের মতো গর্তে না ঢুকে মাঠে আসুন, খেলা হবে।’

হামলার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে ছাত্রদলের নেতাদের নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে অবস্থান করছিলেন আবু শামীম মো. আরিফ। পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা রাতে সেখানে হামলা চালিয়েছেন। তবে কারও হাতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে পুলিশ। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে জেলা শহরের কান্দিপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এ বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে কল করেও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পদ না পাওয়ায় ক্ষোভ থেকে তাঁরা (পদবঞ্চিতরা) হামলা করছেন। তবে তাঁরা কোনো সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন না।

জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর কাউসার মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার বাসায় হামলা করেছে। আমি তো ছাত্রদল করি না। আমার বাসায় কেন হামলা হলো?’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে পদবঞ্চিত নেতারা শুক্রবার পদপ্রাপ্তসহ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা করেন। পরে গতকাল রাতে পদবঞ্চিত নেতারা আবু শামীম মো. আরিফের বাড়িতে চালান। এ নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদ ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহীনুরের মধ্যে মারামারি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ককটেল বিস্ফোরণসহ আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া হয়েছে বলেও তথ্য পেয়েছেন। এসব উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলছে।