আওয়ামী লীগের প্রার্থী মন্ত্রী রেজাউল, স্বতন্ত্র জেলা কমিটির সভাপতি

শ ম রেজাউল করিম এবং এ কে এম এ আউয়াল
ছবি: সংগৃহীত

পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর, ইন্দুরকানি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার দলীয় মনোনয়ন ইস্যুতে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আউয়াল সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র। আরেক ভাই মজিবুর রহমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মজিবুর রহমানের স্ত্রী সালমা রহমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোর নেতৃত্বে আছেন আউয়ালের অনুসারীরা। ফলে শ ম রেজাউল করিমকে দলের একটি বড় অংশের নেতা-কর্মীদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একটি পক্ষ প্রকাশ্যে আউয়ালের পক্ষে মাঠে কাজ করছে। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আউয়ালের অনুসারী হওয়ায় ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে তিনিই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।

পিরোজপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এ কে এম এ আউয়ালের দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে। অন্যদিকে শ ম রেজাউল করিম সংসদ সদস্য হওয়ার পর দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক দিনের জন্যও আসেননি। দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়ালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে শ ম রেজাউল করিম প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ওই নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে দলের কোনো নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেননি। তবে এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে এ কে এম এ আউয়াল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি আরও বেড়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা এবং পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের একটি পক্ষ প্রকাশ্যে আউয়ালের পক্ষে কাজ করছে। দলের একটি বড় অংশ নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ কে এম এ আউয়াল পিরোজপুর-১ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে পরে প্রত্যাহার করে নেন। এবারও দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান বলেন, রেজাউল করিমের জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ ছিল না। নেতা-কর্মীরা ভয়ে কথা বলছেন না। তবে তাঁরা নৌকার পক্ষে আছেন।