সিলেটে কার্যালয়ের আসবাব, অন্দরসজ্জা খুলে নিয়ে গেলেন পরাজিত চেয়ারম্যান

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান কার্যালয়ের আসবাবপত্র, অন্দরসজ্জার জিনিসপত্র খুলে ট্রাকে করে নিয়ে যান। মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ। ভোটের ১৪ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তিনি কয়েকজন শ্রমিকের সহযোগিতায় কার্যালয়ের আসবাব এবং কক্ষের অন্দরসজ্জার জিনিসপত্র খুলে নিয়ে গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শামীম আহমদ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত অর্থ ও বিভিন্নজনের সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদে তাঁর নিজের কার্যালয়ে অন্দরসজ্জা (ইন্টেরিয়র ডিজাইন) করানোসহ নানা আসবাব আনেন। দ্বিতীয় ধাপের গত ২১ মে অনুষ্ঠিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি ৬ হাজার ১৫ ভোটের ব্যবধানে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মো. মজির উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে শপথ নেওয়া শেষে নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মজির উদ্দিনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা রয়েছে।

চারটি চেয়ার এবং চেয়ারম্যানদের নামফলকের বোর্ড ছাড়া প্রায় সবকিছুই পরাজিত চেয়ারম্যান সরিয়ে নিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলেন, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শামীম আহমদ কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে অন্দরসজ্জার জিনিসপত্র খুলে ফেলার পাশাপাশি চেয়ার–টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাব সরিয়ে ফেলার জন্য শ্রমিকদের নির্দেশনা দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ। তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে এসব না খোলার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় মুরব্বি কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে শামীম আহমদ ইউএনওকে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান। তবে ইউএনও চলে যাওয়ার পর শামীমের নির্দেশনায় শ্রমিকেরা কক্ষের সবকিছু খুলে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এসব নিয়ে ট্রাকে করে চলে যান।

কার্যালয়ের আসবাবপত্র, অন্দরসজ্জার জিনিসপত্র খুলে ট্রাকে করে নিয়ে যান পরাজিত চেয়ারম্যান। মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে
ছবি: প্রথম আলো

কোম্পানীগঞ্জের একাধিক জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিক বলেন, কক্ষে থাকা একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), চারটি চেয়ার এবং চেয়ারম্যানদের নামফলকের বোর্ড ছাড়া প্রায় সবকিছুই পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সরিয়ে নেন। ব্যক্তিগত টাকায় কেনা হলেও সরকারি কার্যালয়ে কিছু দান করার পর এটা অনেকটা সরকারিই হয়ে যায়। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে দান করলেও কেবল পরাজিত হওয়ার কারণে একজন জনপ্রতিনিধি সবকিছু খুলে নিয়ে যাবেন, এটা হয় না। এটা অসভ্যতা ও অভদ্রতা। এমন আচরণ কোনো জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে মানুষজন আশা করেন না।

যোগাযোগ করা হলে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত টাকায় জিনিসগুলো কেনা হয়েছিল। তাই সেগুলো খুলে এনেছি।’

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে ব্যক্তিগতভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করাটা ভুল ছিল, খুলে নেওয়াটাও ভুল ছিল। ব্যক্তিগত দান খুলে নিতে পারবেন কি পারবেন না, এ নিয়ে কোনো বিধানও নেই। আমরা এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে তিনি (শামীম আহমদ) আবার এখন বলছেন, সবকিছু লাগিয়ে ঠিকঠাক করে দিয়ে যাবেন।’