সিলেট এমসি কলেজে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তালা, চলছে বিক্ষোভ

সিলেটের এমসি কলেজে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দাবি আদায়ের স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটের মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকসংকট নিরসন ও ছাত্রাবাসে পানির সংকট সমাধানের দাবিতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা দিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। কলেজের অধ্যক্ষ এবং আরও সাত-আটজন শিক্ষক প্রশাসনিক ভাবনে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন।

সিলেট শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের ইতিহাস বিভাগের চারজন শিক্ষক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও গত ৩১ জুলাই থেকে পদগুলো শূন্য আছে। শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, শিক্ষক না থাকায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একটি কলেজের একটি বিভাগে ছয় মাস ধরে একজন শিক্ষকও কর্মরত নেই, এটা দুঃখজনক। অন্যদিকে কলেজের ছাত্রাবাসে পানির সংকট রয়েছে। সেটি দূর করতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ তালুকদার বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কয়দিন আগে মানববন্ধন করেছেন। সে সময় অধ্যক্ষ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে জানিয়েছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীরা তালা দেওয়ায় অধ্যক্ষসহ সাত-আটজন শিক্ষক ভেতরে অবরুদ্ধ রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের এমসি কলেজে
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্র প্রতিনিধি তাজিম উদ্দিন বলেন, তাঁদের হলে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ৫০০ জন। হলে পানি দেড় ঘণ্টা থাকে। এমনটি চলে আসছে গত প্রায় এক বছর ধরে। এ নিয়ে একাধিকবার অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিলেন। সংখ্যায় ৪০ থেকে ৫০ জন ছিলেন। তাঁরা বলেছেন, হলে পানি পান না, কলেজে শিক্ষক নেই। শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে বলেছেন, কলেজ তহবিল থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না, আর শিক্ষক নিয়োগের বিষয়গুলো মন্ত্রণালয় দেখে। তাঁর পক্ষে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এ কথা শোনার পর শিক্ষার্থীরা বের হয়ে গিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরেছেন। এর পর থেকে তিনিসহ সাত-আটজন শিক্ষক ভেতরে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি সিনহা বলেন, ‘হলে পানি না থাকা ক্লাসরুমে শিক্ষক না থাকা—এগুলোর ব্যাপারে অধ্যক্ষ বলেছেন এগুলো তাঁর কাজ না। তবে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে দেশের মানুষের কাছে জানতে চাই, এগুলোর কার কাজ?’