৪০ দিনেও কেউ গ্রেপ্তার হননি, পুলিশের তৎপরতা না থাকার অভিযোগ পরিবারের

যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নিহত কুমিল্লার যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াছমিন নাহার। মামলায় বেসামরিক ছয়জনকে আসামি করা হয়েছিল, যাঁদের সঙ্গে যুবদল নেতার পরিবারের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল।

কোতোয়ালি মডেল থানায় করা মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা হিসেবে ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছিল। যাঁরা সিভিল পোশাকধারী ও সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরিহিত ছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল। এদিকে ঘটনার ৪০ দিন পেরোলেও কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজনেরা। তাঁদের ভাষ্য, থানায় মামলা হলেও আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। তবে পুলিশের দাবি, আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

রোববার দুপুরে তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর যৌথ বাহিনীর নির্যাতনে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। থানায় মামলা হয়েছে প্রায় ৩৫ দিন হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার তো দূরের কথা, পুলিশ ঘটনাস্থলেই যায়নি। আমরা শুরুতে বিচার পাওয়ার যে সম্ভাবনা দেখেছিলাম, এখন তা পুরোপুরি অন্ধকারে। সেনাবাহিনী বলেছিল, আমাদের পরিবারের পাশে থাকবে। তাদের কথা অনুযায়ী আমাদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছে। তবে বিচার পাওয়া নিয়ে কোনো কথাই বলছে না। আমরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।’

নিহত তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। গত ৩১ জানুয়ারি তৌহিদুলের বাবা মোখলেছুর রহমানের কুলখানি অনুষ্ঠান ছিল। আয়োজন চলাকালে ৩০ জানুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তৌহিদুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান সেনাসদস্যরা। পরদিন দুপুরে পরিবারের সদস্যরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, তৌহিদুলের নিথর দেহ পড়ে আছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।

তৌহিদুলের স্ত্রী ও মামলার বাদী ইয়াছমিন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর সেনাবাহিনীর আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছিলেন। তাঁরাই ঘটনার মূল হোতা। তাঁরাই সেনাবাহিনীকে দিয়ে তাঁর স্বামীকে হত্যা করিয়েছেন। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, থানায় মামলা হওয়ার এত দিন পরও একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলায় পুলিশের কোনো তৎপরতা তাঁরা দেখতে পাননি। পুলিশ চাইলে আরও আগেই আসামিরা গ্রেপ্তার হতেন। তাঁরা মামলায় সেনাবাহিনীর কাউকে সরাসরি আসামি করেননি, তবে তাঁরা দেখতে চাই, জড়িত সেনাদের কতটা কঠোর বিচার করে সেনাবাহিনী।

মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন আদর্শ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম, ইটাল্লা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে তানজিল উদ্দিন, মোক্তল হোসেনের ছেলে নাজমুল হাসান, খায়রুল হাসান ও সাইদুল হাসান এবং বামইল গ্রামের পেয়ার আহমেদের ছেলে সোহেল। তাঁদের মধ্যে ফজলুর রহমান ও মোক্তল হোসেন মামলার কয়েক দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের সন্তানদের নির্দোষ দাবি করেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক রাকিবুল ইসলামকে। সম্প্রতি তিনি বদলি হয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন আরেকজন উপপরিদর্শক। পুলিশ মামলাটি ভালোভাবে তদন্ত করছে।

পুলিশের তৎপরতা না থাকার কথা সঠিক নয় বলে দাবি করে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে ফাঁদ পেতে রেখেছি। আসামিরা এলাকা থেকে ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান। ইতিমধ্যে তাঁদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের চেষ্টা ও অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’