মালিক বলেছিলেন ১০ দিনের মধ্যে বাচ্চা হবে মহিষের, তা-ই হলো

গতকাল শুক্রবার বৈশাখী নামের একটি মহিষের বাচ্চা হয়েছে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

ছোট্ট রাজা। বয়স প্রায় সাত ঘণ্টা। হাঁটতে গিয়ে এদিক-সেদিক যাচ্ছে। তবে ঠিকই হেলেদুলে মায়ের কাছে যাচ্ছে। ঠিক যেমন রাজার মা ১৪ দিন পর কাস্টমস থেকে ছাড়া পেয়ে ঠিকই নিজের মালিকের বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল। রাজার মায়ের নাম বৈশাখী।

নিলামে নিজের মহিষ নিজেই কেনার পর মালিক মো. সেন্টু ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমার চারটি মহিষের বাচ্চা হবে। এটা মালিক ছাড়া কেউ বলতে পারে না। অথচ কাস্টমসের তদন্ত কমিটি আমার কথা বিশ্বাস করেনি।’

অবশেষে সেন্টুর কথাই সত্যি হলো। ৯ দিনের মাথায় গতকাল শুক্রবার একটি মহিষের বাচ্চা হলো। অন্য তিনটি মহিষেরও যেকোনো সময় বাচ্চা হবে। গতকাল জন্ম নেওয়া রাজাকে নিয়ে এখন সেন্টু স্বপ্ন দেখছেন। নিলামের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে সেন্টু আপিল করেছেন।

সেন্টু বলেছিলেন, মহিষগুলো ছেড়ে দিলে তাঁর বাড়িতেই যাবে। সেটিও প্রমাণ করেছেন সেন্টু। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নীলবোনা গ্রামে সেন্টুর বাড়ি। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে পদ্মা নদীর স্রোতে সেন্টুর ১৬টি মহিষ ভেসে যায়। পরে মহিষগুলো রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা এলাকায় পদ্মা নদীর ভাটিতে পাওয়া যায়। বিজিবি মহিষগুলো উদ্ধার করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গুদামে পাঠায়।

আরও পড়ুন

খোঁজ পেয়ে সেন্টু প্রমাণপত্রসহ মহিষগুলো নিজের দাবি করেছিলেন। তাঁর কাছে মহিষের জন্ম নিবন্ধনের প্রমাণ, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের প্রত্যয়নপত্র ছিল। মহিষগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেন। মহিষগুলো যে তাঁর, সে ব্যাপারে এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেলের প্রত্যয়নও দেন। এরপর মালিকানা যাচাই করার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি তদন্ত শেষে মতামত দেয়, এই মহিষ সেন্টুর নয়।

সেন্টুর বাড়ির পাশেই নদীর ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে বৈশাখী ও রাজা
ছবি: শহীদুল ইসলাম

পরে তদন্ত কমিটি ১৫টি মহিষ নিলামে তোলে। সেন্টুর দাবি একটি মহিষ নিলামে তোলা হয়নি। তাই তিনি ওই একটি মহিষ নিতে পারেননি। ২১ সেপ্টেম্বর আটটি ও পরের দিন সাতটি মহিষ নিলামে বিক্রি হয়। নিজের হাতে পোষা মহিষের মায়ায় সেন্টু নিজেই আবার নিলাম থেকে মহিষগুলো কিনে নেন। তবে প্রথম দিনের মহিষগুলো অন্য একজন পেয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে বেশি টাকা দিয়ে সেন্টু আটটি মহিষ কিনে নেন। পরের দিনের মহিষগুলো তিনিই পেয়েছিলেন।

২১ সেপ্টেম্বর নিলামের পরে সেন্টু সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে চারটি মহিষের বাচ্চা হবে। তাঁর হিসাব অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টার দিকে গোদাগাড়ীর নীলবোনার চরে বৈশাখী নামের মহিষটির বাচ্চা হয়। ওই বাচ্চার নাম রাখা হয় রাজা। গতকাল সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে রাজাকে নৌকায় করে নদী পার করে বাড়িতে আনা হয়। আর রাজার মা নদী সাঁতরে পার হয়ে আসে। বাড়ির পাশেই নদীর ঘাটে যেখানে মহিষগুলোকে বেঁধে রাখা হয়, সেখানেই তাদের রাখা হয়। পরে অন্য মহিষগুলো আসে। দেখা যায়, সেখানেই রাজা হেলেদুলে হেঁটে মায়ের কাছে যাচ্ছে।

সেন্টু বলেন, তদন্ত সঠিক হয়নি। এ জন্য তাঁর নিজের মহিষ নিজেকেই প্রায় ১৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এ জন্য তিনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর আপিলের আবেদন করেছেন। আবেদনে সেন্টু দাবি করেছেন, সঠিক তদন্ত হলে তাঁর নিলামের টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। একজন কৃষকের জন্য এতগুলো টাকা দেওয়া কষ্টদায়ক। তিনি আরও বলেন, যে মহিষটি নিলামে তোলা হয়নি, সেটিরও একই সময়ে বাচ্চা হওয়ার কথা।

রাজশাহী কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে কমিশনার বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে রাজশাহীতে শুধু এক দিন বসতে পেরেছেন। অচিরেই সেন্টুর আপিল শুনানির জন্য চিঠি করা হবে। শুনানিতে সেন্টু নিজে অথবা তাঁর প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারবেন।