রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের বয়স কত হলো?
সরল এক্কা: রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠন ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা সিসিবিভিও-রাজশাহীর পরামর্শে পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হলেও মূলত ২০১৪ সালে সংগঠনের মূল কার্যক্রম গড়ে উঠছে। ২০০৫ সালে পাঁচটি রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠন গড়ে ওঠে। এখন পর্যন্ত মোট ৫০টি রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠন গড়ে উঠেছে।
এই সময়ে সংগঠনটি খাদ্যনিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছে?
সরল এক্কা: রক্ষাগোলা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ৭০ ভাগ সদস্য পরিবারের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। বাকি ৩০ ভাগ ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবার কতটা উপকৃত হয়েছে?
সরল এক্কা: আমাদের সংগঠিত ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৬০০টি পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। সমপরিমাণ কিংবা তার থেকে বেশি আমাদের জনজাতির আত্মীয়স্বজন স্বাস্থ্য, ভূমি, অর্থ, খাদ্য ও স্থানীয় সরকারের সুবিধা গ্রহণ করছে।
মহাজনি ঋণ কি আর আছে?
সরল এক্কা: মহাজনি ঋণ বিদ্যমান। তবে আমাদের সংগঠিত ৫০টি রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনে মহাজনি ঋণ প্রায় নেই বললেই চলে। আমরা আর মহাজনের কাছে ঋণ করি না, রক্ষাগোলা সংগঠনের সামাজিক পুঁজি ব্যবহার করে আমাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করি।
বিএমডিএর সেচ নিয়ে কি আপনারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন?
সরল এক্কা: হ্যাঁ, সেচের পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে। তবে রক্ষাগোলা সংগঠনের বন্ধু সংগঠন সিসিবিভিওর সহায়তা নিয়ে বিভিন্নভাবে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আপনারা জানেন, এই সেচের পানির অনিয়ম নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় সোচ্চার হয়েছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বর্তমানে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ কিছুটা হলেও অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছে। এই নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা বিশ্বাস করি, রক্ষাগোলা সংগঠন যে চাপ সৃষ্টি করেছে, তাতে বিএমডিএর সেচের পানি কৃষককে ঠিকমতো প্রদান করবে বলে আমি মনে করি।
সেচের পানির ওপর খাদ্যনিরাপত্তা কতটুকু নির্ভরশীল বলে মনে করেন?
সরল এক্কা: এবারের রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৪-এর প্রতিপাদ্য ছিল, ‘খাদ্যনিরাপত্তার স্বার্থে বরেন্দ্রর সেচের পানির অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ভূমির জটিলতা দূর করুন’। কৃষি আমাদের প্রধান পেশা এবং জীবিকার প্রধান উৎস। কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য পানি জরুরি, পানি ছাড়া ফসল ফলানো অসম্ভব। কৃষিতে সেচের পানি পেতে সবচেয়ে ভোগান্তি ও বৈষম্যের শিকার হই আমরা বেশি। তাই আমরা এবার পানির অধিকার চেয়েছি। কৃষিতে সময়মতো পর্যাপ্ত বরেন্দ্রর সেচের পানি পেলে আমাদের সুবিধা হয়। এ ছাড়া সেসব এলাকায় বরেন্দ্রর সেচের পানির সরবরাহ নেই, সেসব এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে চালিত সেচযন্ত্রগুলো সচল রাখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি, সেচের পানির জন্য অগ্রাধিকার ও বৈষম্য-নির্যাতনমূলক আচরণ বন্ধ হওয়া।
গোদাগাড়ীর কৃষক অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডীর মৃত্যুর পর কি পানি সমস্যার সমাধান হয়েছে?
সরল এক্কা: আমাদের জনজাতির কৃষক অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডীর মৃত্যু অত্যন্ত বেদনার। এই মৃত্যু এক দিনে ঘটেনি। দীর্ঘদিনের বৈষম্য, হয়রানি, নির্যাতনের ফলে ঘটেছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা এত কম সময়ের মধ্যে সমাধান হয়নি বা হবে না।