রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পাহাড় কাটা থামছে না: চট্টগ্রামে নাগরিক সমাবেশে বক্তারা

পাহাড়ধসে নিহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন। চট্টগ্রাম নগর, ১১ জুনছবি: জুয়েল শীল

পাহাড়ধসে নিহতদের স্মরণে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ও প্রশাসনিক নির্লিপ্ততায় পাহাড় কাটা থামছে না। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে হলে আগে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়। ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবিতে পিপল’স ভয়েস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের যৌথ আয়োজনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

পাহাড়ধসে নিহতদের স্মরণে নাগরিক সমাবেশ ও মোমবাতি প্রজ্বালনের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম নগর, ১১ জুন
ছবি: জুয়েল শীল

সমাবেশ শেষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে নিহত ১২৭ জন এবং ২০১৭ সালে তিন পার্বত্য জেলায় নিহত ১৬৮ জন স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সেখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।

নাগরিক সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক উদ্যোগ ছাড়া পাহাড় রক্ষা হবে না। বহু বছর ধরে পাহাড় রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করা হচ্ছে। কিন্তু কারও টনক নড়ছে না। বর্ষা এলে সরকারি সংস্থাগুলো কিছু বৈঠক করে। কিন্তু কার্যকর কোনো কিছু এত বছরেও দেখা যায়নি। তাই তাই সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘পাহাড় রক্ষায় যাদের কাজ করার কথা তারা যেন যন্ত্রমানব, নির্লিপ্ত। তাদের ঘুম ভাঙে না। ১৬ বছরে আমরা কিছু করতে পারিনি। যাদের দায়িত্ব ছিল তাদের নীরবতাকে ধিক্কার জানাই। যারাই দায়িত্বে অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি সাংবাদিক জসিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভবন হয়েছে পাহাড় কেটে। সিডিএ পাহাড় কেটে রাস্তা করেছে। সিটি করপোরেশন কাউন্সিল আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কাটছে। যাদের রক্ষার কথা তারাই পাহাড় কাটছে। তাই প্রতি বছর পাহাড়ধসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ কেউ নিচ্ছে না।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, নির্লিপ্ত প্রশাসনকে ধাক্কা দিয়ে সজাগ করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে।

পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক কামরুল হাসান, আইনজীবী প্রদীপ কুমার চৌধুরী, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সভাপতি আলীউর রহমান, অধ্যাপক ইউনুস হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মোস্তফা কামাল, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সদস্য মনসুর মাসুদ, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের উৎপল বড়ুয়া, শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিনস, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নরেশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক লামিও মারমা প্রমুখ।