লোকসানের কথা বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ করলেন ব্যবসায়ীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যের সঙ্গে ক্রয়মূল্যের পার্থক্য থাকায় জেলা শহরের মাংস ব্যবসায়ীরা সোমবার সকাল থেকে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ করেছেন‌‌ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে পার্থক্য থাকায় জেলা শহরের মাংস ব্যবসায়ীরা আজ সোমবার সকাল থেকে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেন। গরুর মাংস কিনতে না পেরে ক্রেতাদের অনেকেই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গরুর মাংসের পরিবর্তে মুরগি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সরকারের নির্ধারিত মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করলে প্রতি কেজিতে ন্যূনতম ৫৫ টাকা লোকসান হবে। তাঁরা জেলা প্রশাসকের বিষয়টি নিয়ে একটি স্মারকলিপি দেবেন বলে জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে পৌরসভার আওতাধীন এলাকায় ফারুকী বাজার, আনন্দবাজার (বড় বাজার), মেড্ডা বাজার, কাউতলী বাজার, দক্ষিণ মৌড়াইল বউ বাজার, বর্ডার বাজার, ভাদুঘর বাজারে গরু, খাসির মাংসের পাশাপাশি মুরগির মাংস বিক্রি হয়। গত শুক্রবার মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, সবজির মতো ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এর মধ্যে গরুর মাংসের দামও উল্লেখ আছে। গত রোববার রাতে জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ এবং যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের একটি তালিকা গরুর মাংস ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করা হয়।

তালিকায় গরুর মাংস প্রতি কেজি দরে উৎপাদন খরচ ৫৮৭ দশমিক ৫০ টাকা, উৎপাদক পর্যায় খরচ ৬০৫ দশমিক ১৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩১ দশমিক ৬৯ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজির দর ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকা উল্লেখ করা হয়। এর জের ধরে জেলা মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতি গরুর মাংস বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এতে সম্মতি দিয়ে জেলা শহরের সব গরুর মাংস ব্যবসায়ী আজ সকাল থেকে জেলা শহরের বাজারগুলোতে কোনো গরু জবাই করেননি। সকাল থেকে তাঁরা মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

জেলা কৃষি বিপনণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, রমজানের আগেও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা ছিল। সরকার এবার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। গরুর খাবারের দাম তো বাড়েনি। এটাও সত্য বেশি দামে গরু কিনে কম দামে মাংস বিক্রিতে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলব।’
বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত জেলা শহরের ফারুকী বাজার, আনন্দ বাজার, মেড্ডা বাজার, কাউতলী বাজার, দক্ষিণ মৌড়াইল বউ বাজার, ভাদুঘর বাজার, বর্ডার বাজারে সরেজমিনে কোনো দোকানেই গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

ফারুকী বাজারে জেলা শহরের বনিকপাড়ার আবদুল আওয়াল পরিবারের জন্য গরুর মাংস কিনতে এসে নিরাশ হন। তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস কিনতে বাজারে এসেছি। কিন্তু কোথাও গরুর মাংস নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে গরু বেশি মূল্যে কেনা পড়ে। তাই তাঁরা মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। আমাকে বাধ্য হয়েই মোরগ কিনতে হয়েছে।’ মো. মনির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘সকাল থেকে জেলা শহরের সব বাজারে গরুর মাংস কিনতে গিয়েছি, কিন্তু কোথাও পাইনি। রমজান মাসে এমন হলে মানুষ খাবে কী।’

দুপুরে ফারুকী বাজারে জেলা মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সদস্যদের একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে দেখা গেছে। সেখানে থাকা মেড্ডা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জাকির মিয়া, ফারুকী বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইউনুস ও মীর মো. কামাল বলেন, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। কেনা পড়ে ৭২০ টাকায়, কিন্তু সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে ৬৬৪ টাকা। বেশি দামে কিনে কম দামে কীভাবে সম্ভব। শহরের ১০০ গরুর মাংস ব্যবসায়ী রয়েছেন। বিক্রি বন্ধের কারণে তাঁদেরও লোকসান হচ্ছে। সরকার যদি যৌক্তিক মূল্যে গরু সরবরাহ করতে পারে, তাহলে ব্যবসায়ীরাও ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভে গরুর মাংস ৬৬৪ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবেন।

জেলা মাংস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেব। সরকারের এই মূল্য নির্ধারণে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসবেন। এই মূল্য শিথিল করে এর চেয়ে বেশি মূল্যে গরুর মাংস বিক্রির সুযোগ করে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ রইল। কারণ প্রতিটি দোকানে পাঁচ-সাতজন কর্মচারীর পেছনে প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ রয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। দিলে হয়তো আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারতাম। সরকার ও ব্যবসায়ীদের আলোচনায় কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’