সড়ক দেবে যান চলাচল বন্ধ ১০ দিন, দুর্ভোগ

চরপুক্ষিয়াসহ সংলগ্ন আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ছে। এতে তাঁরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

সড়কের একাধিক স্থান দেবে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীরা। গত সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার চরপুক্ষিয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চরপুক্ষিয়া গ্রাম। এই গ্রামের মূল সড়কটির একাধিক স্থান দেবে গেছে। দেবে গিয়ে কোথাও কোথাও দুই পাশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে অন্তত ১০ দিন ধরে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরপুক্ষিয়াসহ সংলগ্ন আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ছে।

হামিদ মিয়া চরপুক্ষিয়া গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় কৃষক। যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তিনি একজন। হামিদ বলেন, ‘সড়কটি ব্যবহার করে উপজেলা সদরে আসা–যাওয়া করি। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করার জন্য যান্ত্রিক যান ভরসা। বিশেষ করে সবজি বাজারজাত করার ক্ষেত্রে সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা হলো দেবে যাওয়ায় এখন আর গাড়ি আসা–যাওয়া করতে পারছে না। এতে সবজি বাজারজাত করতে গিয়ে কষ্ট ও ব্যয় দুই বেড়েছে।’

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরপুক্ষিয়া গ্রামের মানুষের সহজ যাতায়াতের জন্য উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) গ্রামটিতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করে। পাকা হওয়ার পর সড়কটি ব্যবহার করে চরপুক্ষিয়া, চরনোয়াকান্দি, ফেকামারা, নরসিংদীর মনোহরদীর চরমান্দালিয়া ও চরঝাকালিয়া গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ। অঞ্চলটি সবজিপ্রধান। ওই সব গ্রামের উৎপাদিত সবজি বিক্রির জন্য সড়কটি ঘিরে সবজির একটি পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। পাইকারি বাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন অন্তত অর্ধশত যান্ত্রিক যান সড়কটি দিয়ে আসা–যাওয়া করে। সবজি পরিবহনে সড়কটি কয়েকটি গ্রামের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি নির্মাণের পর বড় ধরনের সংস্কার হয়নি।

সড়কটির পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদী। সড়কের এক পাশে বসতি, অন্য পাশে নদী। বসতির লোকজনের ব্যবহৃত পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। আবার সড়ক নির্মাণের সময় পানিনিষ্কাশনের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে বৃষ্টি হলে সড়ক উপচে পানি নামে নদীতে। দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টির পানি নামতে গিয়ে সড়কটির কয়েকটি স্থানে নিচ দিয়ে মাটি সরে যায়। কয়েকটি স্থানে মাটি সরে গিয়ে সড়ক বিভক্ত হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেড় কিলোমিটার সড়কটির অন্তত ছয় স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এ কারণে ১০ দিন ধরে সড়কটি সম্পূর্ণ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে বিশেষ দুর্ভোগ বাড়ে সবজিচাষিদের।

চরমান্দালিয়া গ্রামের সবজিচাষি ছিদ্দিক মিয়া। এলাকায় তিনি সফল সবজিচাষি হিসেবে পরিচিত। সড়ক দেবে যাওয়ায় ভুক্তভোগীদের তিনি একজন। ছিদ্দিক জানান, সবজি পচনশীল। তাঁদের চেষ্টা থাকে জমি থেকে উঠিয়ে আনার পর দ্রুত বাজারজাত করা। এ ক্ষেত্রে চরপুক্ষিয়ার সবজি বাজার গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলতে না পারায় পুরো প্রক্রিয়ায় এখন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার কথা জেনে গত সোমবার সকালে সড়কটি দেখে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন।

মুঠোফোনে প্রথম আলোকে রফিকুল ইসলাম বলেন, মূলত পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কটি টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। প্রায় সময় এ সমস্যা হচ্ছে এবং অর্থ খরচ করে সংস্কার করা হচ্ছে। নিষ্কাশনব্যবস্থা থাকলে সড়কটির এত ক্ষতি হতো না।

তিনি জানান, তাঁর ইউনিয়নে আরও কয়েকটি সড়ক নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব কটি সড়ক সংস্কারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী অন্তু বলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সমস্যাটির কথা আমার জানা নেই।’