আহ্বায়ক কমিটিতে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব

১৩ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটি থেকে ১৫ জন পদত্যাগ করেছেন।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে দ্বন্দ্ব ও বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। ৪১ জনের কমিটি থেকে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ১৫ জন। এতে কমিটির কার্যক্রম শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সারা দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির নেতা–কর্মীদের অন্তঃকোন্দলই মেটানো যাচ্ছে না।

১৩ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও আবু আল ইউসুফকে সদস্যসচিব করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আগের কমিটিতে সাখাওয়াত জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে পরাজিত হন। আলোচিত সাত খুন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীও তিনি। আবু আল ইউসুফ আগের কমিটিতে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক।

কমিটি ঘোষণার ৬ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করেন ৪ যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১১ জন সদস্য। তৃণমূল নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, দলে প্রভাবশালী দুটি গ্রুপের লোকজনকে বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। দলে বিভক্তি তৈরি করে আন্দোলনে কতটুকু ভূমিকা রাখা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অথচ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে এবং নেতা–কর্মীদের উজ্জীবিত করতেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছিল।

■ পদত্যাগ করা নেতাদের মধ্যে ৪ যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১১ জন সদস্য।

■ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অন্তঃকোন্দল মেটানো যাচ্ছে না।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেতা–কর্মীদের অতীত ও বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে স্বল্প সময়ের জন্য আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ে সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবে। যতটুকু শুনেছি, নারায়ণগঞ্জে যাতে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য একটি বিশেষ মহল পেছন থেকে কাজ করছে। দলে নেতা–কর্মীদের মান–অভিমান থাকতেই পারে, কিন্তু পদত্যাগ করা সমস্যার সমাধান নয়।’

কমিটি ঘোষণার পরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও আবুল কাউসার। আতাউর বন্দর উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান। মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালামের ঘনিষ্ঠ তিনি। আর আবুল কাউসার আবুল কালামের ছেলে। কাউসার বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি।

নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবুল কালাম মহানগর বিএনপির একটি অংশের নেতৃত্ব দেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে দলে ও সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর সুনাম রয়েছে। তাঁর বাবা জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন।

এদিকে বিএনপির অপর একটি অংশের নেতৃত্ব দেন তৈমুর আলম খন্দকার। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে মেয়রপদে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাজে পরাজিত হন তিনি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তৈমুরকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও বিএনপিতে তাঁর অনুসারী অনেক নেতা–কর্মী রয়েছেন। এই দুই গ্রুপের লোকজনকে কমিটিতে না রাখায় বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে।