স্ত্রীর পর মারা গেলেন স্বামী, আড়াইহাজারে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৩

বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্ল্যাটের কক্ষ। শুক্রবার রাতে আড়াইহাজার পৌরসভার লাসরদী গোয়ালপাড়া এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের ঘটনায় গৃহবধূ চায়না বেগমের পর তাঁর স্বামী রহমান মিয়া ওরফে সোহান (৪৫) মারা গেছেন। আজ রোববার ভোরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হলো।

রহমান মিয়া গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি রূপগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী চায়না বেগম ও ভোরে ওই কারখানার অপারেটর কানিজ খাদিজা মারা যান। স্ত্রী চায়না বেগম ও কারখানার অপারেটর কানিজ খাদিজার সঙ্গে তিনি বিস্ফোরণ হওয়া ফ্ল্যাটটিতে ভাড়া থাকতেন।

আরও পড়ুন

বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত কানিজ খাদিজার মা হাসিনা বেগম এখনো চিকিৎসাধীন। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়া রহমানের শরীরের ৯৯ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাসিনা বেগমের শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আড়াইহাজার পৌরসভার লাসরদী গোয়ালপাড়া এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে ওই বিস্ফোরণ ঘটে। দগ্ধ সবাই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে ছিলেন। বদ্ধ কক্ষে গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ধারণা।

আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. শাজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তাঁরা বিস্ফোরণের খবর পান। ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার সুপারভাইজার ও অপারেটর যৌথভাবে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাঁরা একই রান্নাঘরে রান্না করতেন। রান্নাঘরে সিলিন্ডার ও তিতাস গ্যাসের সংযোগ আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অসাবধানতাবশত রান্না শেষে চুলা বন্ধ না করায় বদ্ধ ঘরে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা উড়ে যায়। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আড়াইহাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, ‘ভবনটির পাশেই আমার বাড়ি। আমরা তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয় এবং আমার বাড়ি কেঁপে ওঠে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা দৌড়ে ঘর থেকে বের হই। পরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, ভবনের চারতলায় বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে সবাই মিলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে পাঠিয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিই।’

গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের চারতলার তিনটি কক্ষের আসবাব তছনছ হয়ে পড়ে আছে। কক্ষগুলোর দরজা-জানালা ভাঙা। জানালার কাচের টুকরা ও গ্রিল ভবনটির আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আগুনে পোড়া বিছানায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি মুঠোফোন পড়ে আছে। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে থাকা তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার অক্ষত।