চাকরি ছেড়ে গ্রামে প্রক্রিয়া করা মাছের ব্যবসা তরুণের, বছরে আয় ১০ লাখ

শরীয়তপুরের একটি গ্রামের বাজারে প্রক্রিয়া করা মাছের ব্যবসা করে শাকিল খান নামের এক তরুণ সফলতা পেয়েছেন। সম্প্রতি সদর উপজেলার সুবচনী বাজারেছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের একটি গ্রামে মাছ কেটে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আর কাজটি করছেন একজন শিক্ষিত তরুণ। মাছের ব্যবসা করে ওই তরুণের এখন বছরে আয় অন্তত ১০ লাখ টাকা। ওই তরুণ সদর উপজেলার সুবচনী গ্রামের শাকিল খান (২৮)।

শাকিল খান দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ প্রক্রিয়া করে দোকানে বসে এবং অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। তাঁর এ ব্যবসায় ২০ তরুণের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সদর উপজেলার সুবচনী গ্রামের তৈয়ব আলী খানের ছেলে শাকিল খান। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করার পর ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিছুদিন কাজ করার পর ২০২০ সালে গ্রামে ফিরে আসেন। নিজেদের ১৫ বিঘা জমিতে মাছ চাষের কাজ শুরু করেন। এরপর আরও ৮ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তাতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন।

শাকিল খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২০ সাল থেকে চাষ শুরু করলেও মাছ বিক্রির জন্য সুবচনী বাজারে ২০২২ সালে ‘রেডি ফিশ ফার্ম’ নামের একটি দোকান খোলেন তিনি। সেখান মাছ কেটে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে প্যাকেটজাত করা হয়। তারপর তা বিক্রি করা হয়। নিজের খামারের মাছ ছাড়াও দেশীয় প্রজাতির কই, শিং, শোল, চিংড়ি, মলা, সরপুঁটি, রুই-কাতলা, ইলিশ, কোরালসহ বিভিন্ন মাছ প্রক্রিয়া করে বিক্রি করা শুরু করেন। দোকান থেকে ও অনলাইনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওই মাছ বিক্রি করা হয়। তিনি ১ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর এমন উদ্যোগ দেখে এসডিএস নামের একটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে আসে। তারা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মাধ্যমে শাকিলকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিতে থাকে।

এই তরুণের মাছের খামার ও প্রক্রিয়া করা মাছ বিক্রয় কেন্দ্রে ২০ কর্মী কাজ করছেন। প্রতিবছর তাঁর মাছের খামার থেকে ছয় লাখ টাকা ও প্রক্রিয়া করা মাছ বিক্রি থেকে আরও চার লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

২০২০ সাল থেকে চাষ শুরু করলেও মাছ বিক্রির জন্য শরীয়তপুর সদর উপজেলার সুবচনী বাজারে ২০২২ সালে ‘রেডি ফিশ ফার্ম’ নামের একটি দোকান খোলেন শাকিল খান
ছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি সুবচনী বাজারে শাকিল খানের রেডি ফিশ ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা বিভিন্ন খামার থেকে মাছ সংগ্রহ করে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে যন্ত্রের সাহায্যে কাটছেন। বিভিন্ন আকারের করে কেটে তা প্লাস্টিকের প্যাকেটে রেখে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করছেন। এসব মাছ বিভিন্ন ক্রেতা কিনে নিচ্ছেন। যাঁরা অনলাইনে অর্ডার করছেন, তাঁদের মাছ বিক্রয় প্রতিনিধিরা বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন।

শাকিল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিক কারণে পড়ালেখা চলা অবস্থায় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি। করোনার কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে আসি। নিজেদের জমিতে মাছ চাষের কাজ শুরু করি। এরপর ওই মাছ প্রক্রিয়া করে মানুষের কাছে বিক্রি করার চিন্তা করি। প্রথমেই অরগানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করে মাছ চাষের দিকে মনোযোগ দিই। এরপর সেই মাছ ও গ্রাম থেকে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ সংগ্রহ করে তা কেটে, পরিষ্কার করে ধুয়ে প্রক্রিয়া করে বিক্রির কাজ শুরু করি। গ্রামে বসে এমন একটি ব্যবসায় সফলতা পাব, তা চিন্তাও করতে পারিনি। অনলাইন ও অফলাইনে সমান ভাবে সাড়া পেয়েছি। আমার এ কাজে বেসরকারি সংস্থা এসডিএস ও পিকেএসএফ আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।’

রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ ঢালী বলেন, সুবচনী বাজারে শাকিল খান নামের এক যুবক মাছ প্রক্রিয়া করে বিক্রি করছেন, যা এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ওই দোকানে আসছেন প্রক্রিয়া করা মাছ কিনতে।

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব প্রথম আলোকে বলেন, একটি গ্রামের বাজারে মাছ প্রক্রিয়া করে বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইন ও অফলাইনে প্রতিষ্ঠানটি বেশ সাড়া ফেলেছে। রাসায়নিকমুক্ত মাছ উৎপাদন ও সংগ্রহ করে তা বিক্রি করার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা শাকিল খান। তাঁরা তাঁকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।