মাদারীপুরে শর্ষের ভালো ফলন, তবে দাম নিয়ে শঙ্কা

এবার মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে চাষিদের। বিক্রির সময় প্রতি মণে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা না পেলে পোষাবে না তাঁদের।

মাদারীপুরে শর্ষে ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠঘাট। সম্প্রতি সদর উপজেলার পখিরা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শর্ষের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে শর্ষের তেলের চাহিদা বেশি থাকায় গত বছরের চেয়ে এ বছর জেলায় ১ হাজার ৯৭ হেক্টরের বেশি জমিতে এর চাষ হয়েছে। তবে শর্ষের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে শর্ষে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৭৬ দশমিক ৬ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এ পর্যন্ত শর্ষের চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৯৮২ হেক্টর জমিতে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এবার শর্ষের আবাদ হবে। গত বছর রবি মৌসুমে জেলায় শর্ষের আবাদ হয়েছিল ১৫ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে।

জেলায় প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে বারি শর্ষে-১৪, বারি শর্ষে-১৫, বারি শর্ষে-১৭, টরি-৭, বিনা-৯ জাতের শর্ষের চাষ বেশি হয়েছে। পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শর্ষের চাষ হয়েছে সদর উপজেলায়। ওই উপজেলায় ৫ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। সবচেয়ে কম শর্ষের আবাদ হয়েছে রাজৈর উপজেলায়, ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে।

কালকিনির লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বিদ্যাবাগিশ এলাকার কৃষক আবদুল লতিফ সরদার (৫৫)। সংসার চালাতে কয়েক যুগ ধরে কৃষিকাজের সঙ্গেই যুক্ত তিনি। এবার আট বিঘা জমিতে শর্ষের চাষ করেছেন তিনি। ভালো ফলন হওয়ার খুশি লতিফ। তিনি বলেন, ‘এই বারকা আবহাওয়া ভালো হওয়ায় শর্ষের বাম্পার ফলন হইছে। প্রতিবছর সার, বিষসহ (কীটনাশক) কৃষি উপকরণের দাম বাড়ে। খরচ গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি গেছে। বাজারে দাম ভালো পাইলে ভবিষ্যতে আরও চাষ বাড়াব।’

একই এলাকার কৃষক আবুল কালাম ও দুলাল হোসেন খানও বিআর, বিনা, মাঘিসহ বিভিন্ন জাতের শর্ষের আবাদ করেছেন। দুলাল হোসেন খান বলেন, ‘এক মণ শর্ষের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। প্রতিবছরই কৃষি উপকরণের দাম বাড়ে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাজারে ফসল নিয়ে গেলে ন্যায্য দাম পাই না। সিন্ডিকেট না থাকলে আমরা কৃষকেরা লাভবান হতাম।’

সদর উপজেলার সিদ্ধিখোলা এলাকার প্রান্তিক চাষি মজিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই শর্ষের চাষ করেন। গতবার ভালো লাভ হয়েছিল। তাই এবারও তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এবার মণপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রির সময় প্রতি মণে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা না পেলে লোকসান হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, চলতি বছর শীত বেশ পড়েছে। এতে কিছু কিছু শর্ষেচাষি ফলন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। ভালো ফলন হওয়ায় আশা করছেন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আর দেশি তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় শর্ষের দামও আগের চেয়ে অনেক ভালো পাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে যেন কৃষকেরা ন্যায্য দাম পান, সে বিষয়টিও কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা দেখবেন।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন জানান, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইতিমধ্যে মাদারীপুরের তেল মিলের মালিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। সেখানে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য দাম দিয়ে শর্ষে না কিনলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, কৃষকদের ন্যায্য দাম পেতে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। তাঁরা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।