বিএনপি নেতাকে না পেয়ে ধরে নেওয়া ছেলেকে ১৪ ঘণ্টা পর ছাড়ল পুলিশ

মাগুরা জেলার মানচিত্র

মাগুরায় দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে প্রায় ১৪ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, বিএনপি নেতা বাবাকে ধরতে এসে না পেয়ে তাঁর দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা সদরে নিজ বাড়ি থেকে ওই কিশোরকে আটক করা হয় বলে দাবি পরিবারের। এর প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ অবশ্য বলছে, এলাকায় চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা সদরের একটি রাস্তা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই শিক্ষার্থীকে ধরে আনা হয়।

পুলিশের হাতে আটক ওই শিক্ষার্থীর বয়স পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৭ বছর ৫ মাস। সে শ্রীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মুন্সী জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে।
এই বিএনপি নেতার স্ত্রী লিজা পারভিনের ভাষ্য, গতকাল রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা সবাই খেয়ে ঘুমাতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে কিছু লোক এসে দরজা খুলতে বলেন। তখন তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পেছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান। পুলিশের ডাকাডাকিতে লিজার শ্বশুর দরজা খোলেন। পরে পুলিশ তাঁর স্বামীকে না পেয়ে ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়।

লিজা পারভিন বলেন, ‘আমার শ্বশুর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দরজা খুলে তিনি নিজের পরিচয় দেন। এরপরও পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় এক পুলিশ সদস্য বলেন, কান টানলে মাথা আসবে। ছেলেকে ধরে নিয়ে গেলে বাবা এমনিতেই আসবে। এই বলে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।’

সকালে এই বক্তব্য দেওয়ার পর বেলা দেড়টার দিকে লিজা পারভিন বলেন, তাঁর ছেলেকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখে একটি কাগজে ছেলের সই নিয়েছে পুলিশ।

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আ ফ ম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ওই ছেলেকে ধরা হয়েছে রাত ২টা থেকে আড়াইটার দিকে, ওদের বাসার সামনে থেকে। শ্রীপুর ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা থেকে। পরিবারের অভিযোগ ১০০ ভাগ মিথ্যা। ওর বাবাকে ধরতে গেলে তাঁকেই ধরতাম।’

শ্রীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মুন্সী জাহাঙ্গীর হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার বিকেলে স্থানীয় বদনপুর মসজিদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একটা দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছিল। এ ধরনের কোনো কর্মসূচি হলেই পুলিশ রাতে আমাদের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি এমন অভিযান চালায়। গতকালও একই ঘটনা ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত আমাকে না পেয়ে ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল।’ তাঁর নামে এক ডজনের বেশি মামলা আছে বলে তিনি জানান।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বেলা ১১টার দিকে বলেন, ‘ওই ছেলেকে আটক করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। এলাকায় চুরিচামারি বেড়ে গেছে। আমাদের অফিসারদের কাছে তথ্য ছিল ছেলেগুলো (রাতে আরও একজনকে আটক করেছে পুলিশ) নেশা করে। তারা চুরির ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে ধরা হয়।’