শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচে উদ্বোধন অনুষ্ঠান, আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চান নেতারা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেবিএম উচ্চবিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন শেষে বক্তব্য দেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়ে সাজ সাজ রব। মাঠে প্রস্তুত মঞ্চ। আয়োজনের শেষ প্রস্তুতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি। অপেক্ষা শুধু সংসদ সদস্যের জন্য। অপেক্ষার পালা শেষ করে উপস্থিত হলেন তিনি। উন্মোচন করলেন নতুন ভবনের উদ্বোধন–ফলক। দল বেঁধে সবাই মিলে সরকারের উন্নয়নের কথা বলেন। আর এই সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহ্বান জানালেন। এই চিত্র ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কেবিএম উচ্চবিদ্যালয়ের।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওই বিদ্যালয়ের নতুন একতলা ভবন উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবনের ভিত্তিফলক ও উদ্বোধন–ফলক উন্মোচন করেন। উদ্বোধনের পর সেখানে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা। সভায় তিনি ও তাঁর দলের নেতারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরে আবারও ভোট চেয়েছেন। আর এই আয়োজন করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানের মঞ্চ, প্যান্ডেল, শব্দযন্ত্র, আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের অধীন সদর উপজেলায় অনুন্নয়ন বাজেটের রাজস্ব খাতে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (টিএমইডি) আওতায় চারটি মাদ্রাসা, অনুন্নয়ন বাজেটের রাজস্ব খাতে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (মাউশি) আওতায় দুটি কলেজ ও পাঁচটি বিদ্যালয়, তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচিত বেসরকারি কলেজে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি কলেজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়। পাশাপাশি নির্বাচিত বেসরকারি মাদ্রাসায় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চারটি মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কেবিএম উচ্চবিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রওশানুল হক, আউলিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবোধ চন্দ্র সেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বক্তব্যে রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম যে এই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন দেব, আমরা কিন্তু আমাদের কথা রেখেছি। আওয়ামী লীগ সরকার কথা দিয়ে সব সময় কথা রাখে। তার একটি উদাহরণ এটি। তাই আসুন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের খরচের বিষয়ে কেবিএম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মঞ্চ, প্যান্ডেল, শব্দযন্ত্র, আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ বিদ্যালয় থেকেই বহন করতে হয়েছে। বিদ্যালয়ে তহবিল না থাকায় আমরা ব্যক্তিগতভাবে খরচ করেছি। সবকিছু মিলিয়ে ৫০ হাজারের ওপরে খরচ হয়ে গেছে।’

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার ভেলাজান আনছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও বাঁশগাড়া সিরাজুল হুদা দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজের ভিত্তিফলক স্থাপন করেন রমেশ চন্দ্র সেন। শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রমেশ চন্দ্র সেন ছাড়াও ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহা. সাদেক কুরাইশীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবার নৌকাকে জয়ী করতে বলেন সবাই।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর আখানগর বলিতাপাড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ বঠিনা শাপলা উচ্চবিদ্যালয় নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। আয়োজনে জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নৌকায় ভোট চান। ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণ বঠিনা শাপলা উচ্চবিদ্যালয়ের তহবিল থেকে খরচ করতে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভবন নির্মাণের ঠিকাদার দিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালি কুমার বর্মণ।

২৬ সেপ্টেম্বর রুহিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে বিদ্যালয় তহবিল থেকে এক লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জন্য প্রায় কোটি টাকার একটি ভবন পেয়েছি। তার বিপরীতে অনুষ্ঠানের খরচের এ টাকাটুকু সামান্যই।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী ইকবাল বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন কাজে যে পাথরটি ব্যবহার করা হয়, সেটা ছাড়া প্রকল্পে অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো বরাদ্দ ধরা নেই। সেসব আয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচেই হয়ে আসছে। তবে কোথাও কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার সহযোগিতা করেছেন।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে ভবন উদ্বোধনের দিন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। আমরা সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কথা বলি। কোথাও কোথাও আমরাও খরচ দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে থাকি।’