চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিয়ের কথা বলে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা চৌধুরী এক নারীকে বিয়ের কথা বলে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ অভিযোগ তোলেন। এর আগে একই অভিযোগের বিষয়ে আজ সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ওই নারীর বাড়ি নাচোল উপলোর ফতেপুর ইউনিয়নে। এদিকে গত ১৯ মার্চ ওসি সেলিম রেজা চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করে থানা থেকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

তবে সেলিম রেজা ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারী কয়েক বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দিয়েছিলেন আদালতে। আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নাচোল থানা–পুলিশকে নির্দেশ দেন। তখন তিনি নাচোল থানার ওসি ছিলেন। তবে ওই মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওই নারী তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই ওই নারী একাধিকবার নাচোল থানায় ও ভোলাহাট থানায় গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করেছেন। এ নিয়ে নাচোল ও ভোলাহাট থানায় একাধিকবার সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই নারী বলেন, ২০২০ সালে সেলিম রেজা নাচোল থানার ওসি ছিলেন। এক আত্মীয়ের মামলার বিষয় নিয়ে সেলিম রেজার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর সেলিম রেজা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এদিকে সম্পর্কের বিষয়টি সেলিম রেজার স্ত্রী জানতে পারলে সেলিম রেজা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে তিনি কয়েকবার ভোলাহাট থানায় গেলে সেলিম রেজাসহ এক কনস্টেবল ও গাড়িচালক তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান। এ ছাড়া তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি বিয়ের দাবিতে অনড় থাকলে সম্প্রতি এক রাতে সেলিম রেজা আমাকে থানায় ডেকে নেয়। এরপর আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং হেনস্তা করেন। সারা রাত ভোলাহাট থানায় আটকে রেখে সকালে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে চালান করে। পরে আমি সাত দিন হাজত খেটে বের হই। পরে জানতে পারি, আমার নামে সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।’

এর আগে ভোলাহাট থানায় ওই নারীর সঙ্গে সেলিম রেজার বিবাদের একটি ভিডিও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘থানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ ও ‘অদক্ষতা’র কারণে সেলিম রেজা চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ। তিনি বলেন, ‘ভোলাহাট থানার ভেতর ওই নারীর চিৎকার চেঁচামেচির ভিডিও চিত্র পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীকে আমরা ডেকে পাঠাই। তাঁর বক্তব্য গ্রহণ করি। পরে থানায় গিয়ে তদন্ত করা হয়। ১৮ মার্চ তদন্ত রিপোর্ট সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন সেলিম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রামের ডিআইজি অফিসে পাঠানো হয়। তবে ওই নারীর সঙ্গে সেলিম রেজার পরকীয়া সম্পর্কের প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাইনি। তবে এ নিয়ে তদন্ত চলছে। ওই নারী আজ সকালে ধর্ষণের অভিযোগ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানতে পেরেছি।’