প্রথম আলোর খবরে মানুষ আস্থা রাখেন

পাবনায় সুধী সমাবেশে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন একজন অতিথি। শনিবার বিকেলে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনেছবি: হাসান মাহমুদ

বস্তুনিষ্ঠ খবর পেতে প্রথম আলোর ওপর ভরসা রাখেন পাঠকেরা। শত প্রতিকূলতার মুখেও সত্য প্রকাশে কখনো পিছপা হয়নি পত্রিকাটি। ২৭ বছরের যাত্রায় বিভিন্ন প্রতিকূলতা সামলে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে প্রথম আলো। এ জন্য প্রথম আলোর খবরে মানুষ আস্থা রাখে। বিপুল পরিমাণ পাঠক প্রতিনিয়ত পত্রিকাটির শক্তি জোগাচ্ছেন।

শনিবার গাজীপুরে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। পত্রিকাটির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুর জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এ সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। একই সময়ে কুষ্টিয়া ও পাবনায় সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, রাজনীতিক, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।

গাজীপুর

বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথম আলোর গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মাসুদ রানার সঞ্চালনায় প্রথমে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এরপর প্রথম আলোর বৈশ্বিক দুটি পুরস্কার নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে ধান গবেষণা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনমিতা রানী।

সুধী সমাবেশে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, ‘প্রথম আলো অ্যাসিড–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেভাবে একটি সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলেছিল, একইভাবে পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলবে। তারা এই কার্যক্রম হাতে নিলে পরিবেশ আরও সুন্দর হবে বলে বিশ্বাস করি।’

একই কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আক্তার জাহান বলেন, ‘সত্য সব সময় সংখ্যালঘু। কিন্তু তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রথম আলোকে শক্তি জোগাতে হবে। প্রথম আলো সবার জন্য উপযোগী একটি পত্রিকা। প্রথম আলো পারিজাত পাপড়ি ছড়ানো পথে এত দূর আসেনি, তাকে কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আমার প্রত্যাশা, প্রথম আলোর যাত্রা হবে সেই পথে, যে পথে সত্য চলে গেছে। নিরপেক্ষ থাকতে বলব না, আমি বলব ভালোর পথে থাকতে, ন্যায়ের পক্ষে থাকতে, সত্যের পথে থাকতে।’

গাজীপুরে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। শনিবার বিকেলে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশ করে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবরের বিরুদ্ধে কিছু পত্রিকা ও ব্যক্তির অভিযোগ আসে। পরে দেখা যায়, এসব প্রতিবাদ খণ্ডন হয়ে যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটুকু বলতে চাই, সত্য ইতিহাস প্রথম আলোর মধ্যে সংরক্ষিত হোক।’

ভাষা শহীদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক বলেন, ‘সত্যই সাহস। প্রথম আলো যে এ রকম একটি সাহসিক কথা বলেছে, এটা সাহস নয়, দুঃসাহস। এই দুঃসাহস আমাদের আস্থাকে আরও বেশি সুদৃঢ় করে।’

গাজীপুর মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলোর থিম ছিল, “যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো।” আজ অবধি তা–ই আছে। এ কারণেই তাদের গ্রহণযোগ্যতা এত দিন শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে ছিল, এখন সেটা বিশ্ব পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে।’

মহানগর জামায়াতের আমির ও গাজীপুর-২ আসনের প্রার্থী হোসেন আলী বলেন, ‘প্রথম আলো সত্য ও সুন্দর পথে থাকার কারণেই এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। সামনে দেশ বিনির্মাণে আরও ভালো ভূমিকা রাখবে। তারা সত্য পথে থাকার কারণেই এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।’

গাজীপুর সুধী সমাবেশে কথা বলছেন কয়েকজন অতিথি। শনিবার বিকেলে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘প্রথম আলো সঠিক জায়গাতেই আছে। আমাদের কারও স্বার্থে আঘাত লাগলেই হয়তো তাদের দোষারোপ করি।’

সাংবাদিক ও লেখক ফারদিন ফেরদৌস বলেন, ‘একটি গণমাধ্যম যদি সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করে, এটি সমাজ ও মানুষের প্রতি একধরনের পরামর্শ হয়। এই সুধী সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রথম আলো আমাদের সবার পরামর্শ নিচ্ছে।’

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা বিভাগ) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো যখন আমাদের কাজকর্মের সমালোচনা করে, এগুলো কিন্তু আমরা গঠনমূলক ও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। আমাদের প্রত্যাশা, প্রথম আলো আগামী দিনগুলোতে আরও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবে। যার মাধ্যমে একটা জেনারেশন, একটা দেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘প্রথম আলো কেবল একটি সংবাদমাধ্যম নয়, এটি চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য তথ্য সংগ্রহের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। বিশেষ করে এর সম্পাদকীয় পাতায় পরিবেশিত তথ্যগুলো কোট করে রেখে যেকোনো পরীক্ষায় আমরা ব্যবহার করেছি। রেফারেন্সের জায়গায় বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে প্রথম আলোর নামটি লিখে দিয়েছি। প্রথম আলোর তথ্য মানেই অথেনটিক তথ্য, এটি সর্বজনগ্রাহ্য।’

গাজীপুর সুধী সমাবেশে অতিথিরা। শনিবার বিকেলে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সুধী সমাবেশে প্রশ্নোত্তর পর্বে পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। তিনি বলেন, ‘পাঠকই আমাদের মূল শক্তি। আমরা ২৭ বছর ধরে যাঁদের জন্য টিকে আছি, তাঁরা হলেন এই পাঠক। এই পাঠকের মধ্যে শিক্ষক আছেন, সংস্কৃতির মানুষ আছেন, রাজনীতির মানুষ আছেন, সমাজসেবী আছেন, বাবা আছেন, মা আছেন। আমাদের বিষয়ে যদি কোনো সমালোচনা থাকে, সেটা আমাদের জানান। যেকোনো প্রশ্ন আপনাদের মনে থাকে, সেটা আমাদের বলবেন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সেগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য। আপনাদের পরামর্শগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করে নিয়ে যাব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উম্মে রায়হান, জার্মান ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ডুয়েটের সহকারী অধ্যাপক মহিদুল ইসলাম, শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাধব চন্দ্র মন্ডল, মুসাফির ইশকুলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পাবনা

সত্য প্রকাশে অনড় প্রথম আলো। সত্য প্রকাশ করায় বিভিন্ন সময় বাধার সম্মুখীন হয়েছে পত্রিকাটি। তবু সত্য প্রকাশে পিছপা হয়নি। প্রথম আলো ক্ষমতালোভীদের বিরোধিতার মধ্য দিয়ে ২৭ বছর টিকে আছে। প্রথম আলো যেন সত্য প্রকাশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, এটাই পাঠকদের প্রত্যাশা।

পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। বিকেলে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর পাবনা জেলা প্রতিনিধি সরোয়ার মোর্শেদ।

সমাবেশে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘যেহেতু প্রথম আলো দেশে বেশি পঠিত হয়, সেহেতু প্রথম আলোই সেরা। প্রথম আলো যেন কারও সঙ্গে আপস না করে, সত্য প্রকাশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।’

পাবনায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সুধী সমাবেশ। শনিবার বিকেলে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: হাসান মাহমুদ

জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইকবাল হুসাইন বলেন, ‘বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে প্রথম আলোর ভূমিকা থাকবে, এটাই প্রত্যাশা। বিগত দিনে প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ ছিল, প্রথম আলো নিয়ে অনেক বিষোদ্‌গার করেছেন, সেটা আমরা শুনেছি। এর মধ্যেই প্রথম আলো ২৭ বছর টিকে আছে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে বহু বছর প্রথম আলো টিকে থাকবে, এটাই প্রত্যাশা করি।’

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ‘সকালবেলা যেমন প্রথম সূর্যের আলো পাই, তেমনি প্রথম আলো দিয়েই দিন শুরু হয়। প্রথম আলো যে আলো ছড়াচ্ছে, তাতে প্রত্যেক মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটছে।’

প্রবীণ শিক্ষক শিবজিত নাগ বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো পড়ি। দেশে একেক দল, একেক মত থাকতেই পারে। কিন্তু রাজনীতির ভেতর একটি কমন বিষয় রয়েছে সংস্কৃতি। পত্রিকার মধ্যেও রয়েছে সংস্কৃতি। প্রথম আলো এটা বোঝে, এটাই প্রত্যাশা করি।’

নারী উদ্যোক্তা ও ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেন বলেন, ‘প্রথম আলো পড়া আমার নেশা। আমার কষ্ট, সাফল্য নিয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলো সব দিকেই নজর রাখে, এটাই তার প্রমাণ।’

পাবনায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন একজন অতিথি। শনিবার বিকেলে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: হাসান মাহমুদ

পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছাত্রজীবনে যখন হলে থাকতাম, তখন দেখতাম, প্রথম আলো পড়ার জন্য সিরিয়াল লাগত। অপেক্ষায় থাকতাম আমি কখন পাব। নিজের সিরিয়াল পেলেই প্রথম ও শেষ পাতা দেখে চলে যেতাম খেলার পাতায়। এখনো সেই অভ্যাসটা রয়ে গেছে।’

চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রথম আলোর সাহস আমাদের সাহসী করে। চলনবিলে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করার চিন্তা চলছে। এটা হলে চলনবিল মারা যাবে। প্রথম আলো বিষয়টি নিয়ে একটি দারুণ প্রতিবেদন করেছে। এটাই প্রথম আলো, ধন্যবাদ প্রথম আলোকে।’

পাবনা মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আখরুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম আলোকে যারা ভালোবাসে, আগামী দিনে তারা শত্রু হয়ে যাবে। কারণ, আমরা সত্য বললেই শত্রু হই। আর প্রথম আলো সত্য প্রকাশে অনড়।’

প্রথম আলো নিয়ে মতামত তুলে ধরেন আমন্ত্রিত এক অতিথি। শনিবার বিকেলে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: হাসান মাহমুদ

অনুষ্ঠানে পাঠকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলো সাহসী সাংবাদিকতা করে। গ্রাম থেকে শহর—মানুষের লড়াই-সংগ্রামের নানা চিত্র তুলে ধরে। নতুন প্রজন্মকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর পথচলায় বিভিন্ন চড়াই-উতরাই রয়েছে, হুমকি রয়েছে। বিভিন্ন সরকারের চক্ষুশূল হয়েছে। প্রথম আলোর সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যেই প্রথম আলো সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করছে। প্রথম আলো সত্য ও সাহসের সঙ্গেই সাংবাদিকতা করবে।’

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোকে নিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন প্রবীণ চিকিৎসক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সরওয়ার জাহান ফয়েজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরিফুল ইসলাম, শতবর্ষী পাঠাগার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির মহাসচিব আবদুল মতীন খান, পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এ বি এম ফজলুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনীতিবিদ মো. জাকির হোসেন, কৃষিবিদ জাফর সাদিক, পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুন নাহার, উপাধ্যক্ষ মো. আশরাফ আলী, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক নূরুল আলম, আটঘরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. বেলাল হোসেনসহ সুধীজনেরা। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে প্রথম আলো নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি অঞ্জলি ভৌমিক। অনুষ্ঠানে অতিথিরা প্রথম আলো নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কুষ্টিয়া

প্রথম আলো শুধু একটি পত্রিকা নয়; এটি একটি প্রতিষ্ঠান। সচেতনতার পথপ্রদর্শক ও জনগণের কণ্ঠস্বর। গুজব থেকে দূরে রাখতে প্রথম আলোর দিকে সবাই তাকিয়ে থাকে। জাতির জাগ্রত বিবেক হিসেবে ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে প্রথম আলো। ভবিষ্যতেও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রথম আলো এগিয়ে যাক, এটাই পাঠকদের প্রত্যাশা।

কুষ্টিয়া শহরের উপজেলা মোড়ে বেসরকারি সংস্থা দিশার সহযোগিতায় তাদের বলরুমে প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। বেলা সাড়ে তিনটা থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন অতিথিরা। বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ও স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান। এতে সহযোগিতা করে এইচঅ্যান্ডএস গ্লাসওয়্যার লিমিটেড।

সমাবেশে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, দেশ ও জাতি গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। আন্দোলন-সংগ্রামের সময় বিভিন্ন গুজব রটানো হতো। তখন তাঁরা প্রথম আলোর মতো পত্রিকার দিকে চেয়ে থাকতেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বিভিন্ন ধরনের গুজব চলছে। এখনো তাঁরা প্রথম আলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রথম আলো সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে, এটাই প্রত্যাশা থাকবে।

প্রথম আলো আয়োজিত সুধী সমাবেশে অতিথিরা। শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দিশার বলরুমে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজা উদ্দীন জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘২৭ বছর ধরে প্রথম আলো শীর্ষ স্থান বজায় রেখেছে। প্রথম আলো শীর্ষ স্থান ধরে রাখুক। জাতির জাগ্রত বিবেক হিসেবে ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রথম আলো স্থান করে নিয়ে সামনের দিনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের দিকে এগিয়ে যাক।’

‘মুক্তি ও নারী’ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মমতাজ আর বেগম বলেন, ‘মানুষ যদি সত্য নিয়ে চলে, তবে সে অনেক কিছু করতে পারে। সবাই প্রথম আলোর সঙ্গে থাকুন।’

দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সকালে যেমন প্রতিদিন পুব আকাশ থেকে প্রথম আলো উদিত হয়, ঠিক তেমনি আমার ঘরেও সকালে যে পত্রিকাটা আসে, তা প্রথম আলো।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রথম আলো প্রথম সূর্যের মতো আমাদের আলোকিত করে। সত্য প্রকাশ করতে হলে সাহসের প্রয়োজন হয়, সেই সাহস প্রথম আলো দেখিয়েছে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বলেন, ‘প্রথম আলো এমন এক জায়গা তৈরি করেছে, তা দেশ থেকে বিদেশেও সমাদৃত। সব ধরনের খবর প্রকাশ করায় মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। ৫৭ শতাংশ কেন, আরও পাঠক তৈরি হোক প্রথম আলোর।’

কুষ্টিয়ায় সুধী সমাবেশ কথা বলছেন একজন অতিথি। শনিবার বিকেলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দিশার বলরুমে
ছবি: প্রথম আলো

স্মৃতিচারণা করে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে বাড়িতে প্রথম আলো নিতাম। বিকেলে পেপার হাতে পেতাম। একসময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশ সম্পর্কে অনেক লেখকের লেখা ছাপা হতো, সেগুলো পড়তাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম আলো পড়তাম। সবার ধারণা, প্রথম আলোর লেখা মানসম্মত, সঠিক এবং কোনো ভুল থাকত না। এখন কিন্তু ভুল চোখে পড়ে। সেগুলোতে সতর্ক থাকতে হবে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) প্রণব কুমার সরকার বলেন, ‘প্রথম আলো শুধু পত্রিকা নয়, এটা একটা প্রতিষ্ঠান। আমাদের সমাজের চিন্তার আলো। সচেতনতার পথপ্রদর্শক এবং জনগণের কণ্ঠস্বর।’

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান আলী মোস্তফা বলেন, ‘অর্থ ও বাণিজ্য পাতায় আরও বেশি বেশি নিউজ ছাপা হোক। স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের খবরগুলো যেন সেখানে স্থান পায়।’

কুষ্টিয়ায় সুধী সমাবেশ। শনিবার বিকেলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দিশার বলরুমে
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্নোত্তর পর্বে পাঠকেরা প্রথম আলোর কাছে তাঁদের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে অনেক দমন-পীড়নের শিকার হয়েছিল প্রথম আলো। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম আলোর সাংবাদিকদের কারাগারে যেতে হয়েছে। এরপরও প্রথম আলো সত্য প্রকাশে পিছপা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি বলেন, ‘পাঠকই আমাদের মূল শক্তি ও সাহস। আমরা পাঠকের কাছে অতীতের মতোই বিশ্বাসযোগ্য থাকতে চাই। সৎ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলব।’

সুধী সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি আনসারী মিরু, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জান্নাতুল ফেরদৌস, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জিহাদুজ্জামান, কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান, এইচঅ্যান্ডএস গ্লাসওয়্যার লিমিটেডের এজিএম মাহবুব জোয়ার্দ্দার, সিনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার ফারুকুর রহমান, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ আলী, কবি শেখ আখতার হোসেন, কবি তুলিকা বিশ্বাস, আবৃত্তিকার এম ডি আসাদ, কবি কনক চৌধুরী, কবি ও লেখক মুন্সী সাঈদ, টিআইবির কো-অর্ডিনেটর রায়হানুল ইসলাম, তালবাড়িয়া কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান, সাংবাদিক মিজানুর রহমান, আনিসুজ্জামান, সাজ্জাদ রানা, নাজমুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।