স্কুলের মাঠ দখলের অভিযোগ

পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করে আধারা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রিপন মাহমুদ ও তাঁর কয়েকজন ভাই ওই জমি দখলে নিয়েছেন।

চিতলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বালু ফেলে ভরাট করে চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে। বুধবার চিতলিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের চিতলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ খেলার মাঠ দখল করে চারদিকে টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। আধারা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রিপন মাহমুদ, তাঁর দুই ভাই জসিম উদদীন মাহমুদ, বাদল মাহমুদ এবং চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম ওই জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেও ওই জমি উদ্ধার করতে পারেনি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শিশু থেকে পঞ্চম—ছয়টি শ্রেণিতে ২৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই সময় শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে আধারা ইউনিয়নের ভাসানচর মৌজার আরএস ২৩৬৮, ৯৩৪, ৯২৭, ৯২৮, ৯২৯, ৯৪১ দাগে জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। এসব দাগে মোট জমি ১৪২ শতাংশ। দুটি বিদ্যালয়ের জন্য ৯৪১ দাগে ৯০ শতাংশ জমি খেলার মাঠ ছিল। পরে জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয়টি অন্য জায়গায় হওয়ায় সব দাগের জমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে হয়। বর্তমানে এসব জমির মাত্র ৩৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। ১০৭ শতাংশ জমি বেদখল হয়েছে। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি আধারা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রিপন মাহমুদ ও তাঁর ভাইরা বালু দিয়ে ভরাট করে দখলে নিয়েছেন।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘২০১৭ সালে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর ১০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত বিদ্যালয়টি ছাড়া আর কোনো জায়গা ছিল না। পর্যায়ক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহযোগিতায় ২৫ শতাংশ জমি উদ্ধার করি। খেলার মাঠটি উদ্ধারের জন্য ২০২০ সালে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করি। মাঠ দখলমুক্ত করার জন্য যতটুকু করা যায় সব করেছি। কোনো কাজ হয়নি।’

আধার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রিপন মাহমুদের মুঠোফোনে কল করে বিদ্যালয়ের মাঠ দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনটি তাঁর চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলামকে ধরিয়ে দেন। এ সময় সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, যে জায়গাটিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বলা হচ্ছে, সেটি তাঁদের পৈতৃক জায়গা। তাঁদের দাদা ওই জায়গা জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের জন্য দান করেছিলেন। পরে এখানে জুনিয়র স্কুল হয়নি। এটি নিয়ে তাঁরা আদালতে মামলা করেছিলেন। আদালত মামলার রায় তাঁদের পক্ষে দেন। দুই মাস আগে তাঁর কাছে রায়ের কপি দেখতে চাওয়া হলে তিনি সে সময় দুদিন পরে দেখাবেন বলে আর দেখাননি।

চিতলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘৯৪১ দাগের ৯০ শতাংশ জমি এখনো স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে আমাদের কাছে রেকর্ডভুক্ত আছে। তবে কয়েক বছর আগে নিম্ন আদালত থেকে রিপন মাহমুদরা তাদের পক্ষে রায় এনেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতে আপিল করলে রায় স্কুলের পক্ষে আসার সম্ভাবনা বেশি।’