আমরা বুঝতে পারি না, কল্পনা আমাদের মাঝে কীভাবে কাজ করে: সাজ্জাদ শরিফ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রকাশমাধ্যম ও চিন্তার বহুত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে
ছবি: প্রথম আলো

চিন্তার বহুত্ব কথাটা বলা খুব সহজ কিন্তু এটি আমরা কতটুকু মানতে পারব। মানুষ বাস্তবে যতটা না বাস করে, তার চেয়ে বেশি বাস করে কল্পনায়। আমরা চিন্তার স্বাধীনতাকে একটি বলয়ের মধ্যে চিন্তা করে থাকি। চিন্তার বহুত্ব মানে ক্রিটিক্যাল বা সমানভাবে ভাবতে পারা। চিন্তার বহুত্ব অর্জন করতে হলে আমাদের সব রকম চিন্তা খুঁটিয়ে দেখতে হবে। যেটিই আমরা গ্রহণ করি না কেন; সেটি আমরা যুক্তি দিয়ে গ্রহণ করব। মোকাবিলার বাইরে চিন্তা এগিয়ে যেতে পারে না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার বেলা তিনটায় ‘প্রকাশ মাধ্যম ও চিন্তার বহুত্ব’ শীর্ষক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ১২৩ নম্বর কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘পৃথিবীতে সব সময় দুইটা শক্তি কাজ করে। একটা প্রগতিশীল শক্তি। তারা মনে করে, মানুষের সম্ভাবনা আছে এবং পৃথিবী এখনো অধরা। কারণ, মানুষের সীমানা বেঁধে দেওয়া যায় না। আর একটা শক্তি মনে করে, মানুষের একটা সীমানা আছে। আমরা যেভাবে কল্পনা করেছি, সেভাবে বোঝাতে হবে। কল্পনা একটি ভয়ংকর জিনিস। আমরা বুঝতে পারি না, কল্পনা আমাদের মাঝে কীভাবে কাজ করে। স্বপ্নই কিন্তু কল্পনা। আমরা কল্পনা যখন আরোপ করি, তখন আমাদের মনে যা আসে, এর চেয়ে সত্য আর কিছু নাই। মানুষের ধর্ম হচ্ছে, তারা ক্রমাগত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু ভবিষ্যৎ সব সময় নিজের ওপর নির্ভর করতে থাকে। কিন্তু সেটা আমরা জানতে পারি না। আমাদের সব সময় অতীত দিয়ে ভবিষ্যৎ জানতে হয়।’

প্রকাশ মাধ্যম সম্পর্কে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা পেয়েছি ১৯৭১ সালে। কিন্তু একাত্তর সালে পত্রিকা বা প্রকাশ মাধ্যমের স্বাধীনতা আসেনি। ষাটের দশক থেকে একাত্তর পর্যন্ত সামাজিক ও জাতীয়তাবাদী লড়াই হয়েছে। সেই সময়ে পত্রিকাগুলো জাতীয়তাবাদী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে লড়েছে। সেটার অনেক মাহাত্ম্য আছে। আমি ছোট করছি না। নব্বই দশকের আগে বাকশাল ও সামরিক শাসনের জন্য স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার সুযোগ বাংলাদেশ পায়নি।

সাজ্জাদ শরিফ আরও বলেন, নব্বই দশকে ঘটনাচক্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ পত্রিকার জন্ম হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা বা ব্যবসায়িক স্বার্থে। সেই সময় বাংলাদেশের পত্রপত্রিকাগুলো ছিল রাজনৈতিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। যে পত্রিকায় মানুষ পৃথিবী দেখতে চাইবে, নানা রকম বহুত্বের মধ্য দিয়ে সেই পত্রিকা ছিল না। সেই পত্রিকা পড়ার সুযোগ এসেছিল ’৯১ সালে। বাংলাদেশের সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতার বয়স ৩০ বছর। এই ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম ১৫ বছর যে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর তৈরি হয়েছিল, পরবর্তী ১৫ বছরে তা সংকুচিত হয়ে এসেছে। সাংবাদিকদের কথা বন্ধ করার জন্য সব আইন প্রয়োগ করা হয়েছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দারের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।