বড় গরু বেচতে না পেরে বিপাকে খামারি ও ব্যবসায়ীরা

গরু মোটাতাজা করে বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন এই খামারি। তারাগঞ্জের ফরিদাবাদ গ্রামেছবি: প্রথম আলো

রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মোটাতাজা করা বড় গরু বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা। এসব গরুর পেছনে এখন দৈনিক খরচ জোগানো নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় পড়েছেন।

মুঠোফোনে আলাপকালে বদরগঞ্জের পাঠানপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ঈদের ১০ দিন আগে খামার থেকে দুটি মোটাতাজা করা বড় গরু কিনেছিলেন ৮ লাখ টাকায়। একেকটির ওজন ১৭-১৮ মণ। গরু দুটি বিভিন্ন পশুর হাটে বেচতে নিয়েছিলেন তিনি। শুধু একজন ক্রেতা একটি গরু সাড়ে তিন লাখ টাকা দাম করেছিলেন। পরে তা আর বিক্রি করতে পারেননি তিনি। অতীতে অনেকবার বড় গরু কিনে বিক্রি করেছেন। এবারের মতো কখনো বিপদে পড়েননি হায়দার।

তারাগঞ্জের ইকরচালি গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার কোরবানির ঈদোত একটা গরু পুষি মোটাতাজা করিয়া ধরা খাইছি। ওজন হইবে কম করি ১৬ মণ। দাম চাইছি ৬ লাখ টাকা। একজন আসি দেখিয়া আড়াই লাখ কহোছে। গরুটাক খাবার কিনিয়া খাওয়াইতে দুই বছরে খরচ হইছে দুই লাখ টাকার ওপরে। বেচাই নেই, এ্যালা চিন্তাত পড়ি গেইনো। দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকার খাবার কিনি খিলাটা মুশকিল হয়্যা গেইল।’

দুটি উপজেলার কয়েকটি পশুর হাটে গরুর ক্রেতা-বিক্রেতা, ব্যবসায়ী ও পশুর হাটের ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার পশুর হাটগুলোতে চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি গরু উঠেছিল। দামও ছিল তুলনামূলক কম। তবে চাহিদা পর্যাপ্ত ছিল না।

পশুসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুটি উপজেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৫০ হাজার ৮৬৩। প্রস্তুত ছিল ৫৯ হাজার ৫৬৫ পশু।

তারাগঞ্জের ফরিদাবাদ ডাক্তারপাড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসানের খামারে গরু আছে ১৬টি। এর মধ্যে এবার চারটি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। ছোট তিনটি গরু অনেক কষ্টে বিক্রি করেছেন। মোটাতাজা করা অন্তত ২০ মণ ওজনের বড় গরুটি তিনি বেচতে পারেননি। পাঁচ লাখ টাকা দামের গরুটি তিন লাখ টাকা দাম বলায় তিনি বেচেননি।

খামারি মাহমুদুল হাসান বলেন, এবার কোরবানিতে মোটাতাজা করা বড় গরুর চাহিদা ছিল না। চাহিদা ছিল ছোট ও মাঝারি গরুর। পাঁচ বছর ধরে কোরবানির আগে মোটাতাজা করার পর বেশ কয়েকটা গরু বিক্রি করেছেন। বেচতে গিয়ে এবারের মতো কখনো সমস্যায় পড়েননি। তিনি আরও বলেন, বেচতে না পারা গরুটিকে প্রতিদিন গম, ডালের ভুসি, চালের কুঁড়া, খইল, ভুট্টার গুঁড়া, চালের খুদ, কাঁচা ঘাস, খড় ও চিটাগুড় কিনে খাওয়াতে ৬০০-৭০০ টাকা লাগে। এই টাকা জোগান দেওয়া যেমন মুশকিল, তেমনই গরু বিক্রি করে খরচের টাকা ওঠানোও কঠিন হয়ে গেছে।

১৬ মণ ওজনের দুটি গরুর দাম কম করায় বিক্রি করেননি বদরগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী হজরত আলী। তিনি বলেন, এখন এক দিন রাখলেই খাবার লাগবে অন্তত এক হাজার টাকার। লাভ-ক্ষতি যা-ই হোক, গরুর এই মন্দাবাজারে কসাইকে দিয়ে কেটে বিক্রি করা ছাড়া উপায় দেখছেন না তিনি।

গরু মোটাতাজা করে বেচতে পারেননি তারাগঞ্জের একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন রহমান, সরকারপাড়া গ্রামের রতন সরকার, হাজীরহাটের হাফিজুল ইসলাম ও দাঁড়ারপড় গ্রামের জুয়েল রানা, বদরগঞ্জের কাঁচাবাড়ি গ্রামের আবেদ আলী ও আমরুলবাড়ী গ্রামের আবদুল মাজেদ।