পাহাড়ের মসলা ‘সাবারাং পাতা’

ভেষজ গুণে ভরা সাবারাং পাতার কদর পাহাড়জুড়ে
ছবি: প্রথম আলো

চাকমাদের কাছে ‘সাবারাং’, মারমাদের কাছে ‘হ্নুংশি’ আর ত্রিপুরারা বলেন ‘বানা’। ইংরেজি নাম ‘লেমন বেসিল’। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ভেষজ গুণে ভরা এই পাতার কদর পাহাড়জুড়ে। অনেকটা তেজপাতা কিংবা ধনেপাতার মতো মসলাজাতীয় এই পাতা সবজি থেকে মাছ-মাংস, সব ধরনের রান্নাতেই ব্যবহার করা হয়। একসময় শুধু নিজেদের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনায় সাবারাং রোপণ করতেন পাহাড়িরা। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবেও এর চাষ হচ্ছে। পাতা বিক্রি করে লাভের মুখও দেখছেন অনেকে।

খাগড়াছড়ি সদরের শিক্ষিকা এমিলি দেওয়ান বলেন, আগে শুধু বর্ষাকালেই সাবারাং পাওয়া যেত। পাহাড়ি নারীরা সারা বছরের জন্য সাবারাং রোদে শুকিয়ে যত্ন করে রেখে দিতেন। এখন সারা বছরই বাজারে সাবারাং পাতা পাওয়া যাচ্ছে। সাবারাং ছাড়া বেগুনের তরকারি রান্নার কথা কোনো পাহাড়ি কল্পনাও করতে পারেন না।

সাবারাং বা বানা দেখতে অনেকটা তুলসীপাতার মতো। চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় গাছটি ঘন শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট, দুই থেকে তিন ফুট উঁচু হয়। পাতাগুলো লম্বায় দুই থেকে চার সেন্টিমিটার। পাতার কিনারা খাঁজকাটা। শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে চারদিকে ছাতার আকৃতির মতো ১০ থেকে ১২টি ছোট ছোট ফুল ফোটে। মসলাজাতীয় পাতাটির গন্ধ বেশ মিষ্টি ও তীব্র। জুমে ও পতিত জমিতে অনেকেই এখন সাবারাং চাষ করছেন।

পানছড়ি এলাকার শ্যামল জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘ছয় বছর আগে জুমের অন্য সবজির সঙ্গে আঁটি করে সাবারাং বাজারে নিয়ে গিয়েছিলাম। বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি। এর পর থেকেই জুমে এবং বাড়ির উঠানে প্রতিবছর সাবারাং চাষ করি।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের রেস্তোরাঁগুলোয়ও সাবারাং পাতা দিয়ে বিভিন্ন পদের খাবার রান্না করা হয়। খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ সিস্টেমের কর্মচারী আচিং মারমা বলেন, ‘সাবারাং পাতার স্বাদ অনেকটা ধনেপাতার মতো। তবে ঘ্রাণটা একটু কড়া। সাবারাং দিয়ে রান্না করা ছোট মাছ পর্যটকদের দারুণ পছন্দ। আগে থেকে কেউ অর্ডার করলে সাবারাং পাতা দিয়ে আমরা নানা ধরনের খাবার রান্না করে দিই।’

খাগড়াছড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক আঁটি সাবারাং পাতার দাম ১০ থেকে ২০ টাকা। বাজারে সাবারাং বিক্রি করছিলেন গাছবান এলাকার গৌরাঙ্গ মোহন ত্রিপুরা। তাঁর ঘরের আশপাশে পাহাড়ের ওপর লাগানো গাছ থেকে এই সাবারাং এনেছেন তিনি। এ বছর তিনি প্রায় এক হাজার টাকার সাবারাং পাতা বিক্রি করেছেন। সামনে আরও বিক্রি করবেন বলে জানান।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা বলেন, পাহাড়িরা মসলা হিসেবে সাবারাং ব্যবহার করে থাকেন। একসময় বাজারে সাবারাং পাতার চাহিদা না থাকলেও বর্তমানে এর চাহিদা বেড়েছে। সাবারাং চাষ করতে তেমন খরচ কিংবা কষ্ট করতে হয় না। মাটি একটু নরম করে বীজ ছিটিয়ে দিলেই চারা উঠে যায়। তবে শীতকালে চারা গাছে পানি দিতে হয়। যে-কেউ চাইলে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করতে পারেন।