আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে সপ্তম দিনের মতো মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। ষষ্ঠ দিনের মতো আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু করা হয়, বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, যত দিন পর্যন্ত তাঁরা টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা না পাবেন, তত দিন এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘেরাও কর্মসূচির সঙ্গে মশালমিছিল করবেন। এরপর আগামী রোববার থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, মশালমিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা, কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।
কয়েক দিনের মতো আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয় ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ ২৩টি দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তা না হলে সাত দিন ধরে টানা এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকার পরও প্রশাসনের কোনো কর্ণপাত নাই। এবার আমরাও প্রশাসনের ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চাই। আমরাও দেখব, তাদের (প্রশাসন) কত ধৈর্য আছে। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরাও প্রতিজ্ঞা করেছেন। এবার টাকার নিশ্চয়তা ছাড়া ঘরে ফিরব না। তাই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, ‘প্রশাসনের কথাবার্তা রহস্যজনক। আমাদের সমাধান দরকার। জাতীয় নির্বাচনের আগেই একটা সমাধানে আসতে হবে। রোববার থেকে ঘেরাও কর্মসূচির সঙ্গে আরও নতুন ও কঠোর কর্মসূচি আসছে। আন্দোলনকারীর সংখ্যাও বাড়ানো হবে।’
বিষয়টি সমাধানে নিজের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই বলে উল্লেখ করছেন মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জায়গা থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তাঁরা পুরো টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা চান। সেই নিশ্চয়তা দেওয়ার ক্ষমতা তো আমার নাই। সমিতিগুলোর মালিকসহ সবাই দীর্ঘ সময় ধরে আত্মগোপনে আছেন। আমি প্রতিদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টাও করছি এবং বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যাচ্ছি।’