বিদ্যালয়ের মাঠে মাটির স্তূপ, খেলাধুলা বন্ধ 

নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মাঠটি ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তবে ঠিকাদার আট মাস ধরে কাজ বন্ধ রেখেছেন। মাটিও সরানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের মাঠে মাটির স্তূপ। পিলার থেকে বের হয়ে আছে রড। সম্প্রতি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয় ও মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেপ্রথম আলো

মুখোমুখি দুটি বিদ্যালয়। একটি প্রাথমিক আর অন্যটি উচ্চমাধ্যমিক। বিদ্যালয় দুটির মাঝে একটি মাঠ। এই মাঠে মাটি স্তূপ করে রেখেছেন ঠিকাদার। এতে আট মাস ধরে দুই বিদ্যালয়ের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ওই মাঠে খেলাধুলা ও সমাবেশ করতে পারছে না। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরা দ্রুত মাঠ থেকে মাটির স্তূপ সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর মোড় এলাকায় এই দুই বিদ্যালয় অবস্থিত। এর একটির নাম মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয় ও অন্যটি মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মধুখালী উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয় ও মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭১ শতাংশ করে ১৪২ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট ও প্রস্থে ৮০ ফুট। মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে ৪৫০ জন। শিক্ষক ১৩ জন ও কর্মচারী ৭ জন। আর মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮০ জন শিক্ষার্থী, ৯ জন শিক্ষক ও কর্মচারী আছেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, উচ্চবিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবনের পিলার নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন। পশ্চিম পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো দোতলা ভবনসহ নবনির্মিত আরও একটি একতলা ভবন। মাঠের এক পাশে মাটির স্তূপ। অন্য পাশে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কিছু পিলার তোলা হয়েছে। পিলার থেকে রড বের হয়ে আছে। ফলে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করা ঝুঁকিপূর্ণ।

মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয় সূত্র জানায়, ৮৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি একতলা ভবন নির্মাণ করছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছেন গাজনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৩০ মে এ নির্মাণকাজের জন্য মাঠটি ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর অনেক পরে শুরু হয় নির্মাণকাজ। কিন্তু শুরুর কিছুদিন পর আট মাস আগে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে চলে যান ঠিকাদারের লোকজন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত অবস্থা একই রকম ছিল। 

মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রামিম বিশ্বাস জানায়, তাদের স্কুলের কক্ষের মধ্যে বসে থাকতে হয়। মাঠে মাটির স্তূপ আর পিলারের রড বের হয়ে থাকায় তারা খেলাধুলা করতে পারে না। একই কারণে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও বন্ধ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শর্মিলা খানম জানায়, স্কুলে এসে পড়াশোনার বাইরে শুধু বারান্দা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটে। মাঠে নামার উপায় নেই।

মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘২০২২ সালের ৩০ মে আমরা ঠিকাদারকে মাঠটি কাজের জন্য বুঝিয়ে দিই। কাজ শুরু করার পর ঠিকাদার আট মাস ধরে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। মাটি স্তূপ করে রাখায় মাঠটি আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এ জন্য আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না। আমি ঠিকাদারকে বলেছিলাম মাঠের মাটি সমান করে দিতে। তিনি রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আর কাজটি করেননি।’

পাশের মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিদ্যুৎ কুমার কুণ্ডু বলেন, মাঠে মাটি স্তূপ করে রাখায় শিক্ষার্থীদের সমাবেশও করা যাচ্ছে না। আর পিলারের রড বের হয়ে থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকেন তিনি।

মথুরাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাঠের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মাটি স্তূপ করে রাখায় দুটি বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। এর জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার সিরাজুল ইসলামকে সম্প্রতি চারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। ঠিকাদারের সহযোগী সুজিৎ সাহাকে মুঠোফোনে ফোন দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ‘এ কাজ রাজস্ব খাতের অর্থায়নে হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারকে এক বছর ধরে কোনো টাকা দিতে পারছি না। এ জন্য কাজটি শুরুর পর বন্ধ রয়েছে। তবে ঠিকাদারকে কাজটি পুনরায় শুরু করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তিনি কাজ শুরু করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’