মাছ নিয়ে মাটিতে চার ঘণ্টা বসে থেকে বাড়তি খাজনার প্রতিবাদ

বাড়তি খাজনা চাওয়ার প্রতিবাদে মাছ নিয়ে এভাবেই মাটিতে চার ঘণ্টা বসে থেকে প্রতিবাদ জানান তরুণ ব্যবসায়ী কলি মাহমুদ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

কোনো রসিদ ছাড়াই ছয় গুণ বেশি খাজনা চাওয়ার প্রতিবাদে এক তরুণ ব্যবসায়ী মাছের আড়তে বসে পড়েন। চার ঘণ্টা পর এ খবর পান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ। তিনি এসে ঘোষণা দেন সরকার নির্ধারিত খাজনার বেশি কেউ আদায় করতে পারবেন না। তারপর তরুণ উঠে দাঁড়ান। আজ বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে।

ওই তরুণের নাম কলি মাহমুদ। রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজে তিনি বাংলায় স্নাতক (সম্মান) পড়ছেন। তাঁর বাবা ইদ্রিস আলী জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের একজন খুচরা মাছ বিক্রেতা। বাড়ি চারঘাট উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। কলি মাহমুদ ছুটির দিনে বাবাকে মাছ বিক্রিতে সহায়তা করেন। তাঁরা বানেশ্বর হাটের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয় আড়ত থেকে মাছ কিনে ওই বাজারে খুচরা বিক্রি করেন।

আজ সকালে বানেশ্বর বাজারের মাছের আড়ত থেকে ২০ কেজি মাছ কেনেন কলি মাহমুদ। এই সময় ইজারাদারের খাজনা আদায়কারী কুরবান আলী ৬০ টাকা খাজনা দাবি করেন কলি মাহমুদের কাছে। সরকার নির্ধারিত খাজনা হচ্ছে প্রতি মণে ২০ টাকা। কলি মাহমুদ জানান, সেই হিসাবে তাঁর ২০ কেজি মাছের জন্য খাজনা হবে ১০ টাকা। ছয় গুণ বেশি খাজনা দাবি করায় কলি খাজনা আদায়কারীর কাছে রসিদ চান। কিন্তু রসিদ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন কুরবান আলী। তবে ৬০ টাকা খাজনা না দিলে তাঁকে স্থান ত্যাগ করতে দেবেন না বলেও জানান তিনি।

কলি মাহমুদ এই ঘটনার প্রতিবাদে মাটিতে বসে পড়েন। সকাল সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাছ বিক্রি না করে তিনি মাটিতে বসে থাকেন। তাঁর পাশে অন্য ব্যবসায়ীরাও দাঁড়িয়ে থেকে তাঁকে সমর্থন দেন। আড়তদার সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ইজারাদারের লোক এভাবেই মাছের আড়তদারদের কাছ থেকে বেশি খাজনা আদায় করেন। এ জন্য আগের চেয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে কম আসেন।

কলি মাহমুদ নিজেই পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ফোন করেন। তাঁর ফোন পেয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউএনও নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসে দেখেন, বাড়তি খাজনার প্রতিবাদে ওই তরুণ মাটিতে বসেই রয়েছেন। ইউএনও বানেশ্বর বাজারের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদকে নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করতে নিষেধ করেন এবং টাকা আদায়ের রসিদ দেওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি। এ সময় ইজারাদারের খাজনা আদায়কারী কুরবান সেখান থেকে সটকে পড়েন।

এ বিষয়ে বানেশ্বর বাজার ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটা একটা ভুল–বোঝাবুঝি। এবার বৈশাখে বাজার ইজারা নেওয়ার পর আমরা বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি, শুধু মাছের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি, এতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। কোনো সমস্যা হবে না। কেউ বেশি খাজনা আদায় করবেন না।’