প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর পর যশোরে, জনসভা ঘিরে প্রাণচঞ্চল নেতা-কর্মীরা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছেন কর্মী–সমর্থকেরা। যশোর, ২৪ নভেম্বর
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে যশোরে গেছেন। বেলা দুইটার দিকে তিনি যশোর শামস উল হুদা স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন। এ উপলক্ষে যশোরে সাজ সাজ রব। নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাদা গেঞ্জি ও লাল-সবুজ টুপি পরে পুরুষ কর্মী-সমর্থকেরা এবং লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি পরে নারী কর্মী-সমর্থকেরা এসব মিছিলে আছেন। সকাল থেকেই যশোর শহরের বিভিন্ন সড়কে এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যশোর জেলার ৮ উপজেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা আসছেন। অনেকে ব্যাগে করে দুপুরের খাবারও নিয়ে এসেছেন। মাথায় ব্যান্ড লাগানো নেতা-কর্মীদের অনেকের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত প্লাকার্ড আছে।

যশোরের মনিরামপুর থেকে জনসভায় আসা রহমত আলী বলেন, ‘বহুদিন পর প্রধানমন্ত্রী যশোরে আসছেন। তাঁকে দেখতে বহু মানুষ যাবে। তাঁর বক্তব্য শুনবে। আমিও এসেছি।’ মাগুরা থেকে আসা সুজয় পাল বলেন, ‘আমার এলাকার তিনটা বাসে করে এসেছি বুধবার বিকেলে। রাতে যশোর শহরের একটি স্কুলে ছিলাম। আজ জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনব। দেখা যাক তিনি বৃহত্তর যশোরবাসীকে কী উপহার দেন।’

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ বছর পর জননেত্রী শেখ হাসিনা যশোরে জনসভায় ভাষণ দিতে আসছেন। এই জনসভা সফল করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। সভাস্থলে প্রবেশের জন্য আট থেকে ১০টি প্রবেশ দ্বার খোলা হয়েছে। সভায় আগতদের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও পানির ব্যবস্থা আছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছেন কর্মী–সমর্থকেরা। যশোর, ২৪ নভেম্বর
ছবি: প্রথম আলো

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এবারের এই জনসভা হবে স্মরণকালের সেরা জনসভা। এই জনসভা শুধু স্টেডিয়ামেই হবে না, গোটা যশোর শহরই জনসভাস্থলে পরিণত হবে। এর জন্য টাউন হল মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় এলইডি বড় স্ক্রিন দেওয়া হয়েছে। ওই স্ক্রিনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সরাসরি দেখানো হবে। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা থেকে কয়েক হাজার বাস আসছে। ওই সব বাস রাখার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ও খালি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আট লাখের বেশি মানুষ জনসভায় যোগ দেবেন।’

যশোরের উন্নয়নে একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের। যশোরের নাগরিক সমাজ ইতিমধ্যে যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে সাগরদাঁড়িতে সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান, যশোর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীতকরণ ও সিটি করপোরেশনের দাবি নিয়ে মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ধীরাজ ভট্টাচার্য, মনোজ বসু, মানকুমারী বসু, দিলারা হাশেম, কবি আজিজুল হক, রফিকুজ্জামানসহ কবি-সাহিত্যিকদের লালনভূমিখ্যাত এই যশোর। সেই যশোরের মানুষের প্রত্যাশা করছেন যশোরের সাগরদাঁড়িতে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

১২ বছর আগে যশোরে মেডিকেল কলেজ হলেও ক্যাম্পাসে কোনো হাসপাতাল স্থাপন করা হয়নি। ক্যাম্পাসে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের জোরালো দাবিও রয়েছে। যশোর মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান বলেন, 'মেডিকেল কলেজের চালুর এক যুগেও হাসপাতাল বাস্তবায়নটি হয়নি। এটি যশোরবাসীর জন্য দুঃখজনক। অবিলম্বের ৫০০ শয্যার হাসপাতাল বাস্তবায়নের দাবি জানাই।'