ঘূর্ণিঝড় রিমালে নিঃস্ব মাকসুদাদের জীবনে ঈদ নেই

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ঘরবাড়ি হারিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে মাকসুদার পরিবার। তাঁদের জীবনে ঈদের আনন্দ নেই। রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার নয়ারচর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে মাকসুদা বেগমের (৩৫) আশ্রয়ের একমাত্র ঘরটি ভেসে যায়। এরপর থেকে তিন সন্তানকে নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর পলিথিনের ছাপরা ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ঝড়ের পর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো ঘর মেরামত করতে পারেননি। এমন অবস্থায় তাঁদের জীবনে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা; কিন্তু মাকসুদাদের জীবনে ঈদের আনন্দ নেই।

শুধু মাকসুদার পরিবারই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের পর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন চর মোন্তাজ ইউনিয়নের বুড়াগৌরাঙ্গ নদের তীরে নয়ার চর এলাকার বেড়িবাঁধে অন্তত ৫০টি পরিবার ঝুপড়ি তুলে আশ্রয় নিয়েছিল। তাঁদের কেউ কেউ আশপাশে আশ্রয় নিলেও মাকসুদাসহ ১০টি পরিবার এখনো কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। গত ২৬ ও ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁরা নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

মাকসুদার স্বামী অহিদ ব্যাপারীর (৪২) নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। মাকসুদা খেত-খামারে কাজ করেন। এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে বেড়িবাঁধের ভেতরে তাঁদের ছোট্ট একটি ঘর ছিল। নয়ার চরে আশ্রয়কেন্দ্র নেই। ঘূর্ণিঝড়ের রাতে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। বাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় ঘরের মালামাল। দুর্যোগের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে সাঁতরে পাশের বেড়িবাঁধে এসে গাছ ধরে রাত কাটান। এরপর থেকে বেড়িবাঁধে পলিথিনের ছাপরা তুলে বসবাস করছেন।

ঈদের দিন সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝুপড়ির সামনে আলগা চুলায় রান্না করছেন মাকসুদা। রান্না শেষে কখন খেতে দেবে, সেই অপেক্ষায় মায়ের গা-ঘেঁষে বসে আছে তিন শিশুসন্তান।

মাকসুদা বেগম প্রথম আলোকে বললেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। তাই স্বামীর আয়ও নেই। টাকার অভাবে বিধ্বস্ত ঘর মেরামত করতে পারছেন না। ঝড়ের পর ১০ কেজি চালসহ সরকারের কিছু ত্রাণ পেয়েছেন। তা দিয়েই চলছে। ঈদ নিয়ে বলেন, ‘পোলাপানদের মুখে তিন বেলা খাওন দিতেই কত কষ্ট করছি। তাই ঈদ নিয়া কোনো চিন্তাভাবনা করিনি। এমনেই ঘরে যা ছিল, সব বইন্যায় নিয়া গেছে। এহন কেমনে ঘরডা ঠিক করুম, হেই চিন্তায় দিন কাটে আমাগো।’

বেড়িবাঁধে সাইফুল সিকদার (৪৫) ও রুমা বেগম (৩৫) নামের আরেক দম্পতি পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন। রুমা বেগম বলেন, ‘বইন্যায় আমাগো সব ভাসাইয়া নিয়া গেছে। জায়গাজমি যা ছিল, ভাঙনে আগেই বিলীন হইছে। বাঁধের ভেতরে ছোট টিনের একটি ঘরে থাকতাম। বাঁধ ভাইঙ্গা ঘরটি ভেসে যায়। এহন বাচ্চাকাচ্চা নিয়া মাথা গোঁজার ঠাঁইও নাই।’ তিনি বলেন, বসতঘর মেরামত ভাবতে গিয়ে ঈদ নিয়ে আপাতত কিছু ভাবছেন না। কোন জায়গা থেকে কিছু পেলে তা দিয়েই ঈদের দিনটা কাটিয়ে দেবেন।

বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এমনিতেই গরিব। তারপরও ঈদ এলে ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনে দেওয়ার চেষ্টা করেন; কিন্তু এবার ঝড়ে তাঁদের ঈদের আনন্দ হারিয়ে গেছে।

চর মোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলমগীর মাল বলেন, নয়ারচর নদীভাঙন এলাকা। বেশির ভাগ মানুষ ভাঙনের শিকার হয়ে বেড়িবাঁধের ভেতরে ছোট ছোট ঘর তুলে থাকতেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালে বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এখন অনেকেই ঘর মেরামত করেছে। তবে যারা বেশি গরিব, তাঁরা এখনো বাঁধের ওপর আছেন। ঝড়ের পর ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণসহায়তা খাদ্যদ্রব্য দেওয়া হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বিধ্বস্ত বাড়িঘরের তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দের পর পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হবে।