লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে আহত শ্রমিক ইউনিয়ন নেতার মৃত্যু

লালমনিরহাট সদর উপজেলার লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম
ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটে বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের সময় শ্রমিক ইউনিয়নের আহত এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজার এলাকায় ওই সংঘর্ষ হয়। পরে রোববার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম (৪৮)। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলা লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংঘর্ষে আরও পাঁচ-ছয়জন আহত হন। এর মধ্যে যাঁদের নাম জানা গেছে তাঁরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, আওয়ামী লীগের কর্মী বিপ্লব ও বাবলু মিয়া। আহত সবাইকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রাজু আহমেদের অবস্থাও গুরুতর। তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, ‘মহেন্দ্রনগর বাজার এলাকায় হরতাল-সমর্থকদের হামলায় গুরুতর আহত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের দাবি, মহেন্দ্রনগর বাজার এলাকায় বিএনপি-সমর্থকদের হামলায় চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জাহাঙ্গীর আলমের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। এটাকে খুন বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মহেন্দ্রনগর বাজার এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার কথা শুনেছি। বিস্তারিত জানা নেই, তাই এখন কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

এদিকে সকালে আদিতমারী উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। লালমনিরহাট শহরের বিভিন্ন স্থানে হরতাল-সমর্থকদের হামলায় দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুড়িমারী-লালমনিরহাট-ঢাকা মহাসড়কে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

লালমনিরহাট শহরে সকালের দিকে হরতালের সমর্থনে একটি ঝটিকা মিছিল থেকে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। একই হরতালের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগের মিছিল হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ি বাজার এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ নিয়ে বের হন। একপর্যায়ে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে বের হলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।

বেলা ১১টার দিকে আদিতমারী উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে মিছিল নিয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয় পক্ষের দুজন আহত হন। এ সময় বিএনপির অফিসের চেয়ার ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। এ সময় সেখান থেকে সরে যান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।