রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বিধি ভেঙে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে সেই অভিযোগ তদন্তের জন্য রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। একই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হরিয়ান ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে।
নির্বাচন কমিশনের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ৪ জুলাই হরিয়ান রেললাইনসংলগ্ন মাঠে ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে জনসভা করে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের প্রচারণা করেছেন বলে অভিযোগ পড়েছে কমিশনে। এই অভিযোগ তদন্ত করে আজ সকাল ১০টার মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, এ ধরনের একটি চিঠি এসেছে। তাঁরা তদন্ত করে নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। আর পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, চিঠি পেয়ে তাঁরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই জমা দেবেন।
প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তাঁরা কেউ সাড়া দেননি।
অভিযোগের বিষয়ে আয়েন উদ্দিনকে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে এর আগে তিনি প্রথম আলোকে একই ধরনের অভিযোগের বিষয়ে বলেছিলেন, তিনি নির্বাচনী এলাকার বাইরে সভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। ওই এলাকার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় চা পান করেছেন। এটা করলেই ভোট চাওয়া হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায়। তিনি এখানকার ভোটার নন। তিনি পবার হরিয়ান ইউনিয়নে এসে একাধিকবার নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। এ কারণে এই ইউপি নির্বাচনের অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা এর প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। ৪ জুলাই তিনি হরিয়ান বাজারে যুবলীগের সভায় নৌকা প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দেন। সবশেষ ৬ জুলাই তিনি কাটাখালী পৌরসভায় প্রধানমন্ত্রীর সামাজিক নিরাপত্তার অধীন ভাতাভোগী মানুষকে জড়ো করে নৌকায় ভোট চান। সেখানে হরিয়ান ইউনিয়নের অন্তত দুই হাজার ভাতাভোগী ভোটার ছিলেন। অন্য দুই জায়গার ভাতাভোগী ছিলেন অন্তত চার হাজার।
ইউপি (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি; অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এই বিধি না মেনে হরিয়ান ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এ নিয়ে একাধিক পদপ্রার্থী স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়সহ নির্বাচন কমিশনে নানাভাবে অভিযোগ দিয়ে আসছিলেন। এবার নির্বাচন কমিশন থেকে তদন্তের নির্দেশ এল।
১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৭৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন (নৌকা প্রতীক), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেবর আলী (মোটরসাইকেল প্রতীক), আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুম মোল্লা (আনারস প্রতীক), জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত প্রার্থী জালাল উদ্দিন (চশমা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফ (ঘোড়া প্রতীক) ও আতিকুর রহমান (চশমা প্রতীক)।