শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে সেবা নিতে আসা রোগীদের লম্বা সারি। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ চার দফা দাবিতে ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনেরা।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে রোগী ও তাঁদের সঙ্গে আসা স্বজনদের প্রচণ্ড চাপ। হাসপাতালের বহির্বিভাগে গাইনি, মেডিসিন, শিশুসহ আরও কয়েকটি ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে রোগীদের লম্বা সারি। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর চিকিৎসকের কক্ষে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছেন রোগীরা। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা না থাকায় চিকিৎসকদের সেবা দিতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে। অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগেও চিকিৎসক ও নার্সদের চাপ সামলাতে হচ্ছে।

এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজটিতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি ৫৩ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ১৫ হাজার টাকা করে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। গত রোববার সকাল থেকে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা চার দফা দাবিতে এ কর্মবিরতি পালন করছেন। এর পাশাপাশি গত সোমবার দুপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন তাঁরা।

তাঁদের এই চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎকদের মাসিক ভাতা ৫০ হাজার এবং শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের মাসিক ভাতা ৩০ হাজারে উন্নীত ও নিয়মিত করতে হবে; এফসিপিএস, রেসিডেন্ট, নন–রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করতে হবে; বিএসএমএমইউর অধীনে ১২টি প্রাইভেট ইনস্টিটিউটের আবাসিক, অনাবাসিক চিকিৎসকদের ভাতা পুনরায় চালু করতে হবে এবং চিকিৎসক সুরক্ষা আইন ও চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক আবদুল আলীম বলেন, একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এই স্বল্প টাকা দিয়ে চলা সম্ভব নয়। সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাতা এবং চিকিৎসকদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা ৩০ হাজার টাকা করতে হবে। কর্মবিরতির কারণে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হলেও বাধ্য হয়ে তাঁরা এ কর্মসূচিতে নেমেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

শিশু বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফিন খান বলেন, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে তাঁদের (চিকিৎসক) ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ইসতিয়াক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে জরুরি বিভাগে রোগীদের চাপ পড়ে। এ সময় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা প্রাথমিক সেবা দিয়ে থাকেন। তবে কর্মবিরতির কারণে এখন প্রচণ্ড চাপ সামলাতে হচ্ছে।

মেডিসিন (মহিলা) বিভাগের স্টাফ নার্স জান্নাত আরা বলেন, ‘শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করায় আমাদের ওপরও প্রচণ্ড চাপ পড়েছে।’

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের বিকাশ চন্দ্র মৃধার স্ত্রী শংকরী রানী মৃধাকে (৬০) শ্বাসকষ্টের জন্য এই মেডিকেল কলেজের মেডিসিন (মহিলা) ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আজ সকালে হাসপাতালে তাঁর ছেলে গোপীনাথ চন্দ্র মৃধা বলেন, হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা প্রায়ই তাঁর মাকে সেবা দিতেন। কিন্তু এখন তাঁদের না পাওয়ায় চিকিৎসকদের ডেকে আনতে হয়। তা–ও সব সময় চিকিৎসক থাকেন না।

এসব বিষয় নিয়ে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সৌমেন চৌধুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-সংকট রয়েছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।