ছেলের পক্ষে প্রচারণার অভিযোগে শাজাহান খানকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি

শাজাহান খানফাইল ছবি

মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছেলে আসিবুর রহমান খানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ ওঠা সংসদ সদস্য শাজাহান খানকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ আলী।

মাদারীপুর-২ (রাজৈর–সদর একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা ১০ দিন তিনি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে স্থানীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের নামে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছেলের পক্ষে কৌশলে ও গোপনে প্রচারণার কাজ করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত শুক্রবার প্রথম আলোয় ‘প্রচারণা চালানোর অভিযোগ শাজাহান খানের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমেদ আলী আজ সোমবার বিকেল ৪টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য শাজাহান খানকে কমিশন থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সেই চিঠির ব্যাপারে এখন কিছু বলতে চাই না। নির্বাচনের পরে এ বিষয় জানাতে পারব।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শাজাহান খান ও তাঁর ছেলে আসিবুর রহমান খানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাভেলুর রহমান খান একাধিক লিখিত অভিযোগ করেন। সব বিষয় পর্যালোচনা করে শাজাহান খানকে প্রথমবারের মতো সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শাজাহান খানকে নির্বাচনী সব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত শনিবার (৪ মে) মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাসভবনে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, আচরণবিধি অনুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্য কারও পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। দলও সংসদ সদস্যের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্য শাজাহান খান স্থানীয় কর্মসূচির নামে প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটার, কর্মী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িতে ডেকে এনে বা নিজে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন।

যদিও শাজাহান খান অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িতে বিভিন্ন কাজে লোকজন আসে, তাঁদের সময় দেই, কথা বলি। নির্বাচন নিয়ে আমি কোনো কাজ করি না।’

প্রথম ধাপে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। এতে শাজাহান খানের বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আসিবুর রহমান খান (আনারস) ও চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেলুর রহমান খান (মোটরসাইকেল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

একই পরিবারের অংশ হলেও পাভেলুর রহমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী। নাছিমের সঙ্গে শাজাহান খানের দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কোন্দল আছে। বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাভেলুর রহমানকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ আসিবুরকে সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। এতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিভেদ প্রকাশ্যে এসেছে।

মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী পাভেলুর রহমান খান বলেন, শাজাহান খান এখনো নিজ বাসভবনে বসেই ছেলের পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। অদ্ভুত কারণে নীরব নির্বাচন কমিশন তাঁর ক্ষমতার প্রভাবে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশনের এমন নীরব ভূমিকা দুঃখজনক। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

পাল্টা পাভেলুর রহমান খান ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আসিবুর রহমান খান বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাভেলুর রহমান খান ও তাঁর কর্মী–সমর্থকরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ভোট কিনতে টাকা বিলাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের শামিল। এ ছাড়া পরাজয় জেনেই নির্বাচনের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাঁর চাচা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার পাঁয়তারা করছেন।’